ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সেই অধর চন্দ্র বিদ্যালয় এখন পরিত্যক্ত

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৫
সেই অধর চন্দ্র বিদ্যালয় এখন পরিত্যক্ত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নিজেই ছিলো গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা রানা প্লাজা ধসের সবচেয়ে বড় সাক্ষী। তার মাঠেই স্থান হয়েছিলো হাজারো মৃত্যুযাত্রীর।

কঠিনতম মৃত্যুভার বহন করা সেই সাক্ষী এখন নিজেই ইতিহাসের পথে, মৃত্যুপথযাত্রী নিজেই!

দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের দিবানিশি অবস্থান ছিলো এর আঙিনায়। প্রতিদিন হাজারো স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারী হতো ভবন প্রাঙ্গণের আকাশ-বাতাস। সেই ভবনটি নিজেই এখন অপেক্ষায় ধসে পড়ার!

সাভারে বড় কোনো আয়োজনের আগে যে ময়দানের কথা মনের অজান্তেই উঁকি দেয় সেটি অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ। জেলাভিত্তিক ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে বন্যার্তদের আশ্রয় শিবির, প্রদর্শনীসহ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে এ প্রতিষ্ঠানের মাঠ।

লাল ফিতা দিয়ে নিশানা উড়িয়ে জানানো হলো ভবনটির মৃত্যুঘোষণা।

হাজার দুয়েক শিক্ষার্থীর মধ্যে এক চতুর্থাংশের পাঠ গ্রহণের ঠিকানা ছিলো এ ভবন। সেটা এখন পরিত্যক্ত– বিষয়টি যেন স্বাভাবিকভাবে মেনেই নিতে পারছে না কেউ।

বছর দু’য়েক আগে ঘটা করে নিজের শততম জন্মদিন পালন করে এখন মৃত্যু ঘোষণার বিষয়টি যেন আশেপাশে থাকা ভবনগুলোর কাছেই এক নির্মম ইতিহাস। কি হলো? হঠাৎ করেই বা কেন মৃত্যু পরোয়ানা জারি হলো ভবনটির?
odhor_chondro
উপায় ছিলো না। বলছেন, স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা। বাংলানিউজকে তিনি জানান, রানা প্লাজার সাক্ষী যে ভবনটি, আমরা চাইনি ভবনটি নিজেই রানা প্লাজা হোক। এখানে শিক্ষা নিতে এসে ঝরে পড়ুক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাণ।

কারণ ভবনটির ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে ভিজে যেতো কম্পিউটার ল্যাবসহ ল্যাইব্রেরির সব বই। ক্লাসের সময় ছাত্র-শিক্ষক সবাই দুরু দুরু বুকে চেয়ে থাকতো ওপরে। কখন না জানি ধসে পড়ে! এ পরিস্থিতিতে আমরা তো আর ঝুঁকি নিতে পারি না। –যোগ করেন মানিক মোল্লা।

ঐতিহ্য আর ইতিহাসের মিশেলে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটির দিকে তাকালে যেন মায়াই লাগে। কত মজার স্মৃতি জড়িয়ে এ স্কুলের সাথে। আসলে সেই দিনগুলোর স্মৃতিই অন্যরকম। বলছিলেন, ভবনটিতে শিক্ষাজীবনের স্মৃতিময় টানা ১০ বছর কাটানো বদরুল আলম লিটন।
odhor_chondro
নিজের প্রিয় আঙিনা নিয়ে এমন আশা-নিরাশার বাণী শোনা গেলো বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মুখে।

১৯১৩ সালের ১০ জানুয়ারি সাত একর জায়গায় নিয়ে বাবা অধর চন্দ্র সাহার নামে জমিদার রাখাল চন্দ্র সাহা প্রতিষ্ঠা করেন এ স্কুল। যে বিদ্যাপীঠ সাভারকে যুক্ত করেছে ঐতিহ্যের সঙ্গে। দিয়েছে অনন্য পরিচয়। তবে রানা প্লাজা ধসে পর হাজারো মরদেহের সাক্ষী হলে স্কুলটির নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে। সেই স্কুলটিই কিনা এখন পরিত্যক্ত তালিকায়!

বিস্ময় অনেকের চোখে-মুখে। উচ্চ শিক্ষার প্রসারে ১৯৬৭ সালে স্কুলের প্রায় আড়াই একর জমি দান করে গড়ে তোলা হয় সাভার কলেজ। যেটি পরে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত হওয়ায় সদ্য সরকারি কলেজ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।

স্কুলটির বিশাল খেলার মাঠ, তিনটি দ্বিতল ভবন, একটি ত্রিতলভবনসহ পাঁচটি ভবনে সব মিলিয়ে কক্ষের সংখ্যা ৫০। এখন মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় যত চাপ পড়বে অন্য ভবনে।

কি হতে পারে ভবনটির ভবিষ্যৎ? আদল ঠিক রেখে নতুন কাঠামো হবে? নাকি ভেঙে ফেলতে হবে।

কিন্তু ভেঙে ফেলার কথা কল্পনাই করতে পারছে না ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গমেজ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেমন বাঁচিয়ে রাখতে চাই শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রাণ, তেমনি বাঁচাতে চাই আমাদের ঐতিহ্য।

আর দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকারের তরফে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- এমনটিই আশা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ঝুকিঁপূর্ণ পরিবেশে পাঠদান করা হচ্ছিলো শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে জীর্ণ ভবন ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দেখে দ্রুত তলব করা হয় হয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা। সেখানে বিশেষজ্ঞ এনে তাদের মতামত নিয়ে তবেই ভবনটি সিলগালা করে দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আরেকটি রানা প্লাজা আমরা হতে দিতে পারি না। প্রকৌশলীদের ডেকে এনে দেখানো হয়েছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় দেরি না করে আমরা ভবন সিলগালা করে দিয়েছি।

তিনি জানান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে সম্পৃক্ত করে ভবনটির কাঠামো ঠিক রেখে সংস্কার করা যায় কি-না সেটা ভাবা হচ্ছে।
odhor_chondro
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, সংসদ সদস্যের নির্দেশে আমরা কাজ শুরু করেছি। ভবনটির শত বছরের ঐতিহ্য মাথায় রেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় জীবনের ঝুঁকি না হয় এড়ানো গেলো কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ? সেই ঝুঁকি নিরসনে কতদিনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেদিকেই তাকিয়ে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৫/আপডেট: ১১২৩
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।