ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষকদের মর্যাদার লড়াই

ফের অনিশ্চয়তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৫
ফের অনিশ্চয়তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

ঢাকা: কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অভ্যন্তরীণ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় মোটামুটিভাবে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিলো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কিন্তু সদ্য ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় বেতন-মর্যাদা নিশ্চিতসহ চার দফা দাবিতে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একযোগে আন্দোলন শিক্ষার পরিবেশ ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চয়তার দিকে।


 
বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের মর্যাদা ‘অবনমনের’ প্রতিবাদ ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিতে গত প্রায় তিন মাস যাবত আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর আগে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি পালন, বক্তব্য-বিবৃতি ও নির্দিষ্ট সময়ে কর্মবিরতি পালন করলেও মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) প‍ূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এদিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ ছিলো।
 
গত ছয় বছরে মঙ্গলবারই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির বাইরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলো।
 
নির্দিষ্ট দিনে ক্লাস-পরীক্ষা না হলে পিছিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে ক্লাসরুটিন ও পরীক্ষার সূচি। ফলে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে আসা সেশনজট আবার বাড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
 
এদিকে সরকার তাদের ‘যৌক্তিক’ দাবি মেনে না নিলে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকিও এসেছে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। ফলে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে।
 
অন্যদিকে অষ্টম বেতন কাঠামো মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরও শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ‘পর্যালোচনার’ আশ্বাসে তাদের ক্ষোভের আগুন যখন কিছুটা স্তিমিত ঠিক সেই মুহূর্তে অর্থমন্ত্রীর এক বক্তব্য ঘিরে সে আগুন আবার জ্বলে উঠেছে।

মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ইঙ্গিত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে। এই কর্মবিরতির কোনো জাস্টিফিকেশন নেই। তারা জানেই না পে-স্কেলে তাদের জন্য কী আছে, কী নেই। ’
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘ইচ্ছেমতো’ পদোন্নতি দেওয়াকে অর্থমন্ত্রী ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।
 
তার এ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া মাত্রই পাল্টা বক্তব্য আসে শিক্ষকদের কাছ থেকে। মঙ্গলবার রাতেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ‘অনভিপ্রেত এবং অসংলগ্ন’আখ্যায়িত করা হয়। তিনি জনগণের নয়, বরং আমলাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
 
ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিবাদে দু’দিনের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির জরুরি বৈঠকে মঙ্গলবার রাতে বুধ ও বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের এ ঘোষণা আসে।
 
মঙ্গলবার রাতে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সর্বশেষ বিবৃতিতেও এসেছে কঠোর আন্দোলনের হুমকি।
 
বিবৃতিতে বলা হয়, ঘোষিত বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চার দফা দাবির কোনোটিই গ্রহণ করা হয়নি, এমনকি দাবি পূরণের বিষয়ে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও দেখছি না। এমতাবস্থায় শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য আমরা অনুরোধ করছি। অন্যথায় আমরা শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
 
এর আগে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। হয় আমাদের দাবি সরকার মেনে নেবে, না হয় লাগাতার কর্মবিরতিসহ আরো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো আমরা।
 
তবে সরকার শিক্ষকদের দাবি মেনে নিলে প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্লাস এবং ছুটির দিনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখে হলেও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শিক্ষকরা।
 
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষক নেতারা বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা তা পুষিয়ে দেবো। কারণ শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়ুক, এটা আমরা কখনোই চাই না।
 
এদিকে শিক্ষকদের এ দাবিকে যৌক্তিক আখ্যায়িত করে তা মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরাও।
 
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তারা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী। তাদের অবমূল্যায়ন করলে তা শিক্ষার্থীসহ জাতির জন্যই অমঙ্গলের কারণ। তাই আমরা চাই সরকার তাদের এ দাবি মেনে নিক, আমরাও দ্রুত ক্লাসে ফিরি।
 
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তার বাসভবনে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, শিক্ষকদের এই বেতন-ভাতা ছাড়া আর বাড়তি কোনো আয় নেই। তাই ব্যাপারটি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। কারণ শিক্ষকদের মনে অসন্তোষ রাখাটা ঠিক হবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৫
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।