ঢাকা: জনসমর্থন ও সামাজিক শক্তি এবং উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বেশি শক্তিশালী জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আরও জোরালো হবে।
বেসরকারি স্কুলে ভর্তি ও এসএসসি ফরম পূরণের সময় নেওয়া অতিরিক্ত ফি সাতদিনের মধ্যে ফেরত না দিলে আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আবারও হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
তবে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি গ্রহণে কারও কোনো যুক্তি থাকলে তা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেন তিনি।
সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে অতিরিক্ত ফি গ্রহণের ইস্যুতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা সাক্ষাৎ করতে এলে এসব কথা জানান তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাবিদরা।
এসএসসির ফরম পূরণ ও ভর্তির সময় নেওয়া অতিরিক্ত ফি সাত কর্মদিবসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার জন্য গত ০৩ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দেন নাহিদ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার আগে কিছু স্কুল বেশি ফি নিয়েছে। এটা বেআইনি, নীতিমালার লঙ্ঘন, এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
অতিরিক্ত টাকা ফেরত এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিলের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।
অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার ও ফেরত দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষাবিদরা একাত্মতা জানালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব আইন-কানুনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সামাজিক সমর্থন, আইনি সমর্থন। আমরা ব্যবস্থা নেবো। আশা করছি, সাতদিনের মধ্যে বোধোদয় হবে, তারা এমন কোনো কাজ করবেন না।
‘এবার আমরা আরও বেশি শক্তিশালী, সামাজিক শক্তি আমাদের সঙ্গে আছে এবং হাইকোর্টের রায় আছে। সব কিছু মিলে আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী। কেউ যেন মনে না করেন, শক্তি নেই, কিছু করতে পারবো না। আশা করছি, কাজটা আরও জোরদার হবে’- বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
অষ্টম বেতন কাঠামোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি ফি ও টিউশন ফি বৃদ্ধি করে দেয়।
এ প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো স্কুল মনে করতে পারে, এখন যে ফি নেওয়া হচ্ছে তা বাড়ানো যৌক্তিক। এমন কোনো যুক্তি থেকে থাকে তাহলে আমাদের জানাবেন। যদি আমাদের জানান তাহলে আমরা বৈঠক করে পুনর্বিবেচনা করতে পারবো। আমরা নিজ থেকেও পর্যালোচনা করবো। এরপরেও যদি কেউ তাদের যুক্তি আমাদের জানান, আমরা তাও বিবেচনায় নেবো। কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত সবাই এ সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য।
‘যে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, যতো ক্ষমতাসীন ব্যক্তিই হোন না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। আমরা আশা করবো, সবাই নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবেন। প্রতিটি স্কুল দায়িত্বশীলতার সঙ্গে টাকা ফেরত দিয়ে নিজেদের বেআইনি কাজ থেকে সরিয়ে আনবে’।
অতিরিক্ত ফি গ্রহণকারীদের তালিকা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ, শিক্ষাবিদ হায়াত মামুদ এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের কার্যক্রম ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রতিবাদ জানান।
শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইনসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সুলতানা কামাল বলেন, অতিরিক্ত ফি নিয়ে তারা অন্যায় করছেন। তারা জবাবদিহিতার সম্মুখীন হচ্ছেন না। জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে এলে এতো সহজে অতিরিক্ত ফি নিতে পারতেন না।
আইনের চোখে সবাই সমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারাই সরকারি নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত ফি নিচ্ছেন, তারাই আইনের চোখে নিয়ম ভাঙছেন।
অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, আদায় করা অতিরিক্ত ভর্তি ফি অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। কারণ, এটা নিয়ম ছাড়াই নিজের নিয়ম নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। এছাড়া আদালতের রায় আছে। যারা অতিরিক্ত ফি নিয়েছেন. তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনদের সই করা বিবৃতি পড়ে শোনান সুলতানা কামাল।
এতে বলা হয়, ‘বেসরকারি অনেক স্কুলে বছরের শুরুতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন, ভর্তি ফি আদায় করছে। বেশ কয়েকটি স্কুলে ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ ফি বাড়ানোর ফলে অভিভাবকদের ওপর বাড়তি বোঝা ও অনভিপ্রেত চাপের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি নীতিমালার বাইরে বেতন ও ভর্তি ফি বৃদ্ধির এই ঘটনা ক্রমাগত অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে’।
‘মূল ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অযৌক্তিক ভর্তি ফি ও বেতন বৃদ্ধি কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারি নীতিমালা অমান্য এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জিম্মি করে এ ধরনের চাপ সৃষ্টি করা অন্যায়’।
‘একদিকে অভিভাবকরা রাস্তায় নেমেছেন, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের অনমনীয় মনোভাবের কারণে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়’।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আশা করছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো আদালতের নির্দেশনার আলোকে এই অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক প্রয়াস বন্ধে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে’।
ইমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ড. মনজুর আহমেদ, শিক্ষাবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান, নজরুল ইসলাম, সেলিনা হোসেন, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ ২৮ শিক্ষাবিদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর