ময়মনসিংহ : মোট শিক্ষার্থী ২৫০ জন। তাদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন।
নিত্যদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিয়েই ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। নেই টয়লেট ও টিউবওয়েল। সমস্যায় ভারাক্রান্ত এ বিদ্যালয়ের নাম চান্দেরটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ময়মনসিংহের ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের এ বিদ্যালয়টি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
তবে স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের এ নিয়ে ন্যুনতম কোন মাথাব্যথা নেই।
সরেজমিনে দেখা গেলো, সরকারি এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে পাঠদান করে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষক আছমা-উল-হুসনা। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয় ছেড়ে দূরের বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।
এ বিদ্যালয়ের একমাত্র সহকারী শিক্ষক আছমা-উল-হুসনা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও আর কোন শিক্ষক না থাকায় আমাকে যাবতীয় কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই শিক্ষক সংকটের কারণে দূরের বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।
স্কুলের নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বিদ্যালয়ের ৩টি শ্রেণি কক্ষের ২টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিদ্যালয়ে নেই কোন টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আশপাশের বসত-বাড়িতে গিয়ে টয়লেট সারতে হয়।
এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইভা আক্তার বাংলানিউজকে বলে, আমাদের বিদ্যালয়ে সমস্যার শেষ নেই। এক ম্যাডামই ভরসা। তিনিই সব সামলান। ছাদ থেকে কখন পলেস্তারা খসে পড়ে এ দুশ্চিন্তা নিয়েই ক্লাস করতে হয়। এভাবে ক্লাস করতে ভালো লাগে না।
একই রকম কথা জানায় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার। ক্ষোভ নিয়ে তারা বলে, এর চেয়ে বরং আমাদের বিদ্যালয়টিই বন্ধ করে দেয়া হোক।
এ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম জানান, ভবনের আগে শিক্ষক প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানিকুজ্জামান মানিক বলেন, এতো সমস্যা উপজেলার আর কোন বিদ্যালয়ে নেই। একজন শিক্ষক থাকায় আড়াইশ’ শিক্ষার্থীকে ঠিকমতো পাঠদান করা যাচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ত্রিশাল উপজেলা সহকারী প্রথমিক শিক্ষা অফিসার দেলোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কট। আর এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য ডেপুটেশনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণি কক্ষের মধ্যে দু’টি শ্রেণি কক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোর মধ্যে এ বিদ্যালয়ের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
জেডএম