ঢাকা: উচ্চশিক্ষা স্তরে ভর্তির জন্য এইচএসসি উত্তীর্ণদের আসন সংখ্যায় কোনো সমস্যা হবে না। এইচএসসি উত্তীর্ণ এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে ভর্তি আসনের হিসেবে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের পছন্দটাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় আসন সোয়া নয় লাখ।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলে দেখা যায়, আটটি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন।
ব্যানবেইসের এক তথ্যানুযায়ী, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আসন রয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৩৩২টি।
এবার এইচএসসিতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের অধিকাংশের টার্গেট থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), মেডিকেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল ও টেক্সটাইল কলেজ- সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের মতো আসন রয়েছে। ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এমন ভালো মানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি নিয়ে আসন সংকটে থাকবেন।
এইচএসসি পাসের পর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের থাকে সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা বুয়েটে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় আসন রয়েছে দুই হাজার ১১০টি, আর বুয়েটে রয়েছে ৯৬৫টি আসন। ফলে জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞানের অনেক শিক্ষার্থীই তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন না।
এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের স্থান হবে অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ব্যানবেইস সূত্র জানায়, ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে সাত লাখ ৫১ হাজার ৫৮টি। এর মধ্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫২ হাজার ৮০টি আসন। ৭৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ ৪৫ হাজার আসন। সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে তিন হাজার ৬৯৪টি এবং বেসরকারি মেডিকেলে সাত হাজার ২৭৫টি।
তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হন না বলে জানায় ব্যানবেইস।
ইউজিসির ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ছয় হাজার ৬০০টি, রাজশাহীতে তিন হাজার ৮৫১টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চার হাজার ৫৩৩টি, জাহাঙ্গীরনগরে দুই হাজার ২৩৫টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৪২৬টি, সিলেটের শাহজালালে এক হাজার ৭০৮টি, খুলনায় ৯৭৯টি আসন রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ২০০টি এবং বুয়েটে রয়েছে ৯৯১টি আসন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শ্রেণিতে আসন দুই লাখ চার হাজার ২০০টি ও পাস কোর্সে দুই লাখ ৪০ হাজার। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ হাজার।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রকৌশল ও মেডিকেল টার্গেট থাকলেও বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
ভালো মানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন সংকট হওয়ায় বাধ্য হয়েই মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাদের বড় অংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
যদিও সরকার বলছে আসন কোনো বাধা হবে না, কিন্তু বাস্তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে মুখ ফিরিয়ে নেন শিক্ষার্থীরা।
এইচএসসির ফল প্রকাশ উপলক্ষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর ভর্তি আসনের জন্য বাধা হবে না। পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নাও হতে পারে। জগতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে সবচেয়ে পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে সবাই ভর্তি হয়।
এইচএসসি স্তরে কলেজগুলোতে সাত লাখ আসন ফাঁকা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখানেও (উচ্চশিক্ষা) আমি নিশ্চিত যে অনেক আসন ফাঁকা থাকবে। কেউ ভর্তি হতে পার না- এমন না। কোনো বছর ভর্তি হতে পারেনি এমন দেখাতে পারবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৬
এমআইএইচ/আরএইচএস