নয়াবাজার মোড় থেকে: নতুন হল নির্মাণ এবং নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে (জবি) স্থায়ীভাবে লিজ দেওয়ার দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পুরান ঢাকা। শিক্ষার্থীরা এই মুহূর্তে পুরান ঢাকার নয়াবাজার মোড় অবরোধ করে রেখেছে।
দাবি আদায়ে স্মারকলিপি দিতে সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করলে বংশাল এলাকায় শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। তারপরই নয়াবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে যোগ দেয় সংগঠনটির দুই শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের স্লোগানে স্লোগানে এখন প্রকম্পিত পুরান ঢাকার বংশাল, তাঁতীবাজার, ইংলিশ রোড, রায়সাহেব বাজার, কোর্ট-কাচারি এলাকা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করলে ৩ দফা বাধা দেয় পুলিশ। সর্বশেষ বংশাল মোড়ে মিছিল পৌঁছালে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। এতে অর্থনীতি বিভাগের একজন ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের নিকটস্থ বাংলাদেশ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহিম বলেন, আমরা তাদের সামনে ৩টি ব্যারিকেড দিয়েছি। তারা তা ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে আমরা টিয়ারশেল নিক্ষেপে বাধ্য হই। প্রধানমন্ত্রী এই মুহূর্তে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আছেন। সেখানে এই ২-৩ হাজার শিক্ষার্থীর দেখা করা সম্ভব নয়। আমরা বলেছি, প্রতিনিধিদল আমাদের কাছে আসতে। তাহলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের দেখা করার ব্যাবস্থা করে দেবো, কিন্তু তারা তা শুনছেন না।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। আমরা ২২ হাজার শিক্ষার্থীর দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। একক কোনো প্রতিনিধি নেই আমাদের। তবে একটি প্যানেল পাঠাতে পারি, যদি তারা আমাদের সরাসরি জানায়।
আন্দোলনে যোগদানের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জবি ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে। আগামীতেও হল আন্দোলনে জবি ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে।
অবরোধ চলাকালে নয়াবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় প্রচুরসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
কলেজ থেকে ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হল ছিল প্রভাবশালীদের দখলে। বিভিন্ন সময়ে সেসব হল উদ্ধারের দাবি উঠলেও ২০০৯ সালে শিক্ষার্থীদের জোরালো আন্দোলনে সরকারের উচ্চ মহলের টনক নড়ে। ওই সময় একাধিক হল উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ করে। কিন্তু তা কার্যকর করেনি ঢাকা জেলা প্রশাসন।
এরপর ২০১১ ও ২০১৪ সালে আবারও জোরালো আন্দোলন হলে দু’টি হল পুনরুদ্ধার হয়। কিন্তু তা এখনও ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবার আরেকটি হল আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তা নিয়ে দেখা যায়নি কোনো পরিকল্পনা। দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ রয়েছে নতুন দু’টি হল নির্মাণের উদ্যোগেও।
এবার ২০ দিন ধরে নানা উপায়ে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। প্রথম দিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন না হলেও গত দু’দিন ধরে ধর্মঘট পালনের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম।
এ আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সমর্থন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
এইচএ/
** জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্থবির পুরান ঢাকা
** জবি শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ
** জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষক সমিতি ও নীল দলের সমর্থন
** প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে জবি শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা সোমবার
** হলের দাবিতে ধর্মঘটে অচল জবি
** রোববার পর্যন্ত আলটিমেটাম জবি শিক্ষার্থীদের