রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তিনি তাঁর স্বপ্ন, চ্যালেঞ্জ ও নানাবিধ সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সাথে।
উপাচার্য হওয়ার পর নিজের অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘৩৫ বছরের শিক্ষকতা-জীবনে আমার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। এখন ভিসি হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। ’’
এসময় তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং নিয়োগ প্রকিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নতুন উপাচার্য বলেন, ‘‘আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাব। বর্তমানে শেকৃবি’র শিক্ষকরা বিদেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আসছেন। শেকৃবি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে গবেষণা, শিক্ষার মান ও অবকাঠামো খাতে এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। ’’
এ প্রতিষ্ঠানকে কৃষিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদেশের কৃষির অগ্রগতির প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘‘এদেশের কৃষির অগ্রগতিতে তিনটি মাইল ফলক রয়েছে। এদেশের কৃষিতে প্রথম মাইলফলক স্থাপন করেন তৎকালীন পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক। তিনি ১৯৩৮ সালে মান্ধাতার আমলের চাষাবাদ পদ্ধতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটির নাম বদল করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট’।
কৃষিবিদদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়া হতো। এ নিয়ে কৃষিবিদদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ ও হতাশা ছিল। বঙ্গবন্ধু এবিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেন। যা ছিল এ দেশের কৃষিবিদদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়ার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কৃষিতে পড়েছে। গবেষণা করে দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এটি ছিল এদেশের কৃষির উন্নয়নে দ্বিতীয় মাইলফলক।
দেশের কৃষিতে তৃতীয় মাইলফলক স্থাপন করেছেন কৃষকরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০০১ সালের১৫ জুলাই এ দেশের কৃষি উন্নয়নের সূতিকাগার বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণাটি দেন। আজ এ বিশ্ববিদ্যলয় থেকে মানসম্মত কৃষিবিদরা বের হচ্ছেন। তারা দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। এ কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ’’
সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা সবাই স্কয়ার ফিট হিসেবে বাসা ভাড়া দেয়। এতে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আপত্তি জানিয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু পুরনো বাসা আছে। যেগুলো গত ৩০ বছর আগেই ভেঙ্গে ফেলার কথা। ছাদ ফেটে বৃষ্টির পানি পড়ে। কিন্তু শিক্ষকরা অতি উচ্চ হারে ঐ বাসাগুলো ভাড়া দিয়ে থাকেন। তবে নতুন কিছু বাসায় অধ্যাপকদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বাসা না পাওয়ায় তারা স্কয়ার ফিট হিসেবে ভাড়া দেন। এটি কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে হয়েছে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে নতুনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। ’’
সাংবাদিকতা পেশাটি দিন দিন বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। বর্তমানে তরুণদের মাঝে কৃষি-সাংবাদিকতায় আসার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাই আগামীতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি-সাংবাদিকতার উপর মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
১৯৫৭ সালের ১ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার বিজয়নগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। তিনি ১৯৮১ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট বর্তমান শেকৃবি’তে এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর ৩৭টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ ২ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, ২৮ আগস্ট, ২০১৬
জেএম/