ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কুয়েটে খান জাহান আলী হলের ডাইনিং দুর্নীতি চরমে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
কুয়েটে খান জাহান আলী হলের ডাইনিং দুর্নীতি চরমে

খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) খান জাহান আলী হলের ডাইনিং পরিচালনায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রদের নিম্নমানের খাবার খাইয়ে টাকা আত্মসাত করে চলছে ডাইনিং কর্তৃপক্ষ।

হলের বর্তমান ডাইনিং ম্যানেজার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বষেয়র ছাত্র ইফতেখার হাসান রূমি (রোল-১২০১০১৪) এবং নাজমুল ইসলাম (রোল-১২০১০২৫) এই দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টিতে সোচ্চার। তবে তাদের অভিযোগে গা করছে না কর্তৃপক্ষ। একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তাদের অভিযোগ হলের প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্টের কাছে জানানো হলেও তারা কোন প্রকার পদক্ষেপ নেন নি। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে আন্দোলনে যাওয়ার কথাও ভাবছে হলের শত শত শিক্ষার্থী।  

ডাইনিং এর বয় বেয়ারাদের সঙ্গে কথা বলেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।   নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বয় বাংলানিউজকে জানান, বরাদ্দের তুলনায় কম খাবার সরবরাহ করা হয়। ফলে হলে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত খাবার পান না।

দায়িত্বশীল সূত্র থেকে দুর্নীতির একটি খতিয়ানও পাওয়া গেছে। হলের ২৮০ জন ছাত্র ও ৪০ জন স্টাফের জন্য দৈনিক প্রায় ৮-১০ কেজি মুরগী, ৮ কেজি আলু এবং ২০-৩০ টি ডিম সরবরাহ করা হচ্ছে।   যেখানে স্বাভাবিকভাবে দরকার ২৫-৩০ কেজি মুরগী,৩৫-৪০ কেজি আলু এবং ৮০-১০০ টি ডিম।

এছাড়াও বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি সরবরাহ করছে যা আবার প্রয়োজনের তুলনায় কম।
আগে সাপ্তাহিক বরাদ্দে গরুর মাংস দেয়া হলেও এ মাসে একদিনও তা দেয়া হয়নি।

ছাত্রদের অভিযোগ বাজারের সব চেয়ে নিম্নমুল্যের মাছ সিলভার কার্প দেওয়া হয় যেখানে সাধারণভাবে রুই-কাতলাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু দেশি মাছ দেয়ার কথা।

বর্তমানে সাধারণ ছাত্রদের অনেকেই ডাইনিং খেতে যান না। বরং তারা বাইরের খাবারের দোকান থেকে খেয়ে নেন যা অনেকের জন্যই কষ্টসাধ্য।

জানা যায়, ডাইনিং ম্যানেজারের জন্য প্রতিদিন বাজার বাবদ প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকে। অথচ নিম্নমানের খাবার দিয়ে তারা একটি বড় অংকের টাকা আত্মসাত করছেন।

চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্র বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, এ মাসের ডাইনিং খুবই জঘন্য ছিলো। কিছুই খাওয়ার মত পাওয়া যেতো না।

সববেলাতেই সিলভার কার্প মাছ দেওয়া হয়, যা খাওয়ার যোগ্য না, বলেন এই শিক্ষার্থী।

তিনি জানান, দুপুরে ও রাতে দু বেলাই বাইরে খেতে হয়।

তবে অনেকে সামর্থ্যের অভাবে বাইরে খেতে না পেরে এসব অখাদ্য গলধকরণ করেন।

অপর এক শিক্ষার্থী বলেন সবচেয়ে অবাক লাগে, যখন দেখি এগুলা মনিটর করার মত কেউ নেই। প্রশাসনের কোন দায়িত্ব নেই বলেই মনে হয়। তাই আমরা খুবই হতাশ।

তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, ডাইনিংয়ে ১৫ মিনিট দেরী করে গেলেই ভাজি,  মুরগী পাওয়া যায় না। কয়েক দিনতো হাফ ডিম পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

ক্ষোভের সাথে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে তারা আন্দোলনে যাবেন।

ডাইনিং ঘুরে দেখা গেছে, খাবার পরিবেশন ও রান্নার পাত্রগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ডাইনিংয়ে হাত ধোয়ার জায়গাগুলো অপরিচ্ছন্ন। এছাড়া চেয়ার-টেবিলগুলো পুরাতন হওয়ায় ময়লা লেগেই থাকে।

পাশের ড্রেনে ডাইনিংয়ের ময়লা ফেলে রাখায় দুর্গদ্ধে খাবার খেতে কষ্ট হয় বলেও জানালেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।  

কর্মচারীদের কয়েকজনের অভিযোগ করেন, ডাইনিং পরিষ্কার রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়মিত সরবরাহ না থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

হলের প্রভোস্ট প্রফেসর এ এন এম এনামুল কবীর এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, সব কিছুর দাম বেশি তাই কেনা কাটার সমস্যা হচ্ছে বলে ডাইনিং ম্যানেজার জানিয়েছে।

ডাইনিং ম্যানেজার ইফতেখার হাসান রূমি বাংলানিউজকে বলেন, আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই না। স্যারদের সাথে কথা হয়েছে। আমি এখন ভালো করার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ সময়  ১১২৫ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
এমআরএম/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।