ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কোচিংবাজ শিক্ষক ধরতে মাঠে নেমেছে দুদক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
কোচিংবাজ শিক্ষক ধরতে মাঠে নেমেছে দুদক ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: রাজধানীর সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য রুখতে এবার মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি ও তাদের সম্পদের অনুসন্ধানও শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। এজন্য সারাদেশের কোচিংবাজ শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার খুঁজতে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিশেষ একটি টিমও গঠন করেছে দুদক।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোচিংবাজ শিক্ষকদের তালিকা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আজিমপুর গভ:মেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং  উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ জনের মতো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
 
আরো জানা গেছে, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হলি ক্রস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, গভ:মেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, অগ্রণী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডি গভ:মেন্ট বয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পর্যায়ক্রমে সারাদেশের কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা করবে দুদক।
 
এদিকে ২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবে না। তবে তারা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য স্কুল, কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে দিনে সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। তবে কোনো কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে না।   কিন্তু কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এই নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই দেদারছে কোচিং বাণিজ্য করে যাচ্ছে। তাই শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীরা যেন প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দুদক এই কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে।
 
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যক্রম ও কর্মকর্তাদেরও কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, সেবা গ্রগিতাদের হয়রানি, দুর্নীতির কারণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখে দুর্নীতিবাজদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে মাউশির মহাপরিচালককে কিছু দিনের মধ্যে চিঠি দেবে কমিশন।
 
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। আর এতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেননা কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা করছি এবং তাদের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছি। কোচিং ব্যবসায় জড়িত শিক্ষকদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কেননা তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। তাই কোচিং ব্যবসায় জড়িত শিক্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
 
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই জানিয়েছে, দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা জিরো ট্রলারেন্স। শিক্ষামন্ত্রলয়কে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে কিছু শিক্ষক দুর্নীতি করছেন এটা সত্য। সেই দুর্নীতিবাজদের শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে সরাতে চাই, কিন্তু পারছি না। তবে দুদকের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কেননা দুদক তথ্য দিলে আমরা সেই সব দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে পারব। দুর্নীতি সব স্থানেই রয়েছে যা চেষ্টা করলেই তাৎক্ষণিক বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে দুর্নীতি সমাজের একটি ব্যাধি যা নির্মূল করতেই হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।