হতভাগ্যের নাম তানভীর রহমান। শনিবার (৩১ মার্চ) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ভবনের নিচ থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি, সে তার ব্যাগ ও ফোন রেখে নিচে লাফ দেয়। ’
একমাত্র পুত্রসন্তানের এমন মৃত্যুতে পাগলপ্রায় ফসিউর রহমান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘হতাশা থেকে এমন কাজ করবে ছেলে, জীবনেও কল্পনা করতে পারিনি। মারা যাওয়ার দেড় মাস আগে একবার তানভীর বাড়িতে এসেছিল। কয়েকদিন বাড়িতে থেকে যাওয়ার সময় তার মায়ের পায়ে ধরে সালাম করেছিল। বলেছিল মা তোমাকে সালাম করে যাই। আর কোনোদিন দেখা না হতে পারে। ’‘তানভীর প্রায় সময়ই তার মায়ের কাছে বলতো, আমার বাবা কিসের মুক্তিযোদ্ধা? আমি বিভিন্ন সরকারি চাকরি দেওয়ার পরও আমার চাকরি হয় না। এ থেকে তার মনে একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে। কথাগুলো তার মায়ের কাছ থেকে শোনার পর আমি তাকে ঢাকার উত্তরায় একটি বায়িং হাউজে চাকরির ব্যবস্থা করে দেই। তিন দিন কাজ করার পর হঠাৎ তার মাকে ফোন করে বলে, আমাকে তোমরা মাফ করে দিও। এরপর শনিবার রাতে তার এ মৃত্যুর খবর আসে। ’
তানভীরের চাচা শেখ মুহাম্মদ মুহসীন বলেন, ‘সে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোথাও তার হচ্ছিলো না। এ কারণে সবশেষ উত্তরায় এক বন্ধুর কোম্পানিতে গত বৃহস্পতিবার যোগ দেয় সে। কিন্তু এ চাকরি তার পছন্দ ছিল না। এজন্য হয়ত এমন করতে পারে বলে আমাদের ধারণা। ’
মুহসীনের ভাষ্যে, ‘তার স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করবে। সরকারি চাকরিতে নিজের ইচ্ছায় কাজ করা যায় ও মর্যাদাও ভালো, এ কথা সে প্রায়ই বলতো। কিন্তু তা পাওয়ার জন্য ‘আর্থিক লেনদেন’ ও ‘রাজনৈতিক পরিচয়’র কথা বলে আক্ষেপ করতো সে। তানভীর মনে করতো, কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় তার চাকরি হতো না। ’
তানভীরের বন্ধু সাফায়াত হোসাইন বলেন, ‘সে খুব মেধাবী ছিল। এইচএসসি পরীক্ষার পর সে মানসিকভাবে এলোমেলো হয়ে যায়। তার ও পরিবারের প্রত্যাশা অনেক ওপরে ছিল। কিন্তু হিসাবে মিলছিলো না বিধায় হতাশা থেকে এই কাজ করতে পারে সে। ’
তবে তানভীরের সহপাঠীদের কণ্ঠে ভিন্ন কথাও শোনা যায়। ঢাবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থী ইকবাল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘তানভীরের মাঝে এমন কিছু দেখিনি। সে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতো। পরীক্ষায় সে পাস মার্ক তুলতে পারলে খুশি থাকতো। সবার সঙ্গে সে মজা করতো। বেশি উচ্চাশা তার মধ্যে লক্ষ্য করিনি। যদিও বেশি কিছু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেনি। ’
ঢাবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আব্দুল হাকিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘তানভীর ২০১৪-১৫ সেশনে ভর্তি হয়েছিল। দুই বছরের কোর্স হলেও সে মাঝখানে এসিসিএ (অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্ট) করেছে। যার কারণে সে কোর্স শেষ করতে পারেনি। কী জন্য আত্মহত্যা করেছে, সেটি দেখছি। ’
তবে তানভীর রহমান যে সরকারি চাকরির জন্য বেশ চেষ্টা করেছিলেন, সেটা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তৎপরতা দেখলে বোঝা যায়। ২০১৪ সালে ১১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার লিংক শেয়ার করে তিনি ক্যাপশন দেন, ‘আর কতো চাপা মারবেন?’
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের তরুণ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীও আত্মহত্যা করেন। বন্ধুদের ভাষ্যে, তিনিও নানারকম হতাশায় ভুগতেন।
**‘মা তোমরা আমাকে মাফ করে দিও’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৮
এসকেবি/এইচএ/