সোমবার (২ এপ্রিল) সারাদেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম দিনে বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ালেও পরীক্ষা শেষে তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘প্রশ্নফাঁসসহ পরীক্ষায় যাবতীয় অনিয়ম ঠেকাতে একজন মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব সবই আমরা করেছি। প্রশ্নের প্যাকেট সিকিউরিটি টেপ দিয়ে আটকানো হয়েছে ও প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করা হয় পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট আগে। এছাড়া প্রতিকেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে প্রশ্ন পৌঁছাতে কড়া সতর্কতা ও নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবকিছুই আমরা করেছি। এরপর আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়। আশা করছি প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না। ’’
সম্প্রতি শেষ হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রায় সবক'টি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন ও জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলেন সংসদ সদস্যরা।
আশঙ্কা ছিল বরাবরের মত এবারও প্রশ্ন ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ধরনোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে না। তবে এবার সেই নেতিবাচক ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো।
আগের পরীক্ষাগুলোর সময় ফাঁকফোকর ও ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার প্রশ্নফাঁস রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ২৮টি ইউনিট কাজ করছে। প্রশ্নফাঁসের তথ্য দিতে জরুরি সেবার ‘৯৯৯’ নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে। আর পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতরা ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এছাড়া প্রশ্নফাঁস রোধে গত ২৯ মার্চ থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন তাদের প্রশান্তি ও সন্তুষ্টির কথা। সংশ্লিষ্টদের
শান্ত নামের নৌবাহিনী কলেজের এক শিক্ষার্থীর বড়ভাই ফয়সাল রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রশ্নফাঁস যেন আজকাল খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আর পরীক্ষার্থীরা, বিশেষ করে আমার ছোটভাইকে দেখছি পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড উদগ্রীব। আর এ কারণে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়। সম্ভাব্য সেই ক্ষতি পোষাতে আমি নিজেও সম্ভাব্য জায়গায় (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি। আগের সব ফোন নম্বর এবার বন্ধ পেয়েছি।
এদিকে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের পরীক্ষার্থী নাঈম ইসলাম জানায়, এবার পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো খবর পাইনি। আর আমাদের স্যারেরাও (শিক্ষকরা) আগে থেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ থাকবে না। স্যারদের কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে শান্তি আছে।
প্রসঙ্গত, এবছর সারাদেশে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। আর ১৪ থেকে ২৩ মে’র মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ২ এপ্রিল, ২০১৮
এমএএম/জেএম