এখনও তার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রয়েছে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর মধ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো সেরা কলেজের স্বীকৃতির তকমা রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের।
রাজশাহীর প্রমত্তা পদ্মার তীর ঘেঁষে অবস্থিত কলেজটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম কলেজের পরে বাংলাদেশের ৩য় প্রাচীনতম কলেজ। ছোট্ট পরিসরে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদানের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ ও দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠ।
১৪৫ বছরের গৌরবোজ্জ্বল পথ পারি দিয়ে ১৪৬ বছরে পা রেখেছে দেশসেরা এই কলেজটি। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখনও স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল ঐতিহ্যের রাজশাহী কলেজ। সুদীর্ঘ পথ চলায় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৮টি সূচকের ভিত্তিতে তিনবার দেশসেরার মুকুট অর্জন করেছে। পেয়েছে ডিজিটাল কলেজের খেতাবও।
উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বরেন্দ্রের জমিদারদের উদ্যোগে। তাই এ কলেজের জন্মগাঁথা রাজশাহী শহরের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ১৯৩৩ সালে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা পড়ার সুযোগ লাভ করে এ কলেজে।
১৮৭৩ সালে দুবলহাটীর রাজা হরলাল রায় বাহাদুরের আর্থিক সহায়তায় স্থাপিত হয় রাজশাহী কলেজ। ১৮৭৩ সালে এপ্রিলের ১ তারিখে রাজশাহী জেলা স্কুলে (বর্তমান কলেজিয়েট স্কুল) এফএ (ফার্স্ট আর্টস) শ্রেণী চালুর মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন হরগোবিন্দ সেন। ১৮৭৭ সালের অক্টোবর মাসে স্নাতক কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৮৭৮ সালে স্নাতক কোর্স চালু হয়। কলেজের প্রথম ভবন (বর্তমান প্রশাসনিক ভবন) নির্মাণ করা হয় ১৮৮৪ সালে। ১৯০২ সালে পুঠিয়ার রাণী হেমন্তকুমারী তার নামে একটি হোস্টেল এবং মহারাণী হেমন্তকুমারী সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করা হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতকোত্তর কলেজ হিসেবে ১৮৮১ সালে এমএ কোর্স এবং ১৮৮৩ সালে আইন কোর্স পরিচালনার অনুমতি লাভ করে। এ কলেজে আইকম, বিকম (পাস) এবং বিকম (সম্মান) কোর্স চালু হয় যথাক্রমে ১৯৫২, ১৯৫৪ এবং ১৯৬১ সালে।
১৯৯৬ সালে এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক কোর্সে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ২০১০ সালে তা পুনরায় চালু করা হয়। বর্তমানে কলেজে ২৪টি বিভাগে স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর, ডিগ্রি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪৮ জনে।
রাজশাহী কলেজের ফুলার ভবন, হাজি মুহাম্মদ মহসীন ভবন, প্রশাসন ভবনের মত লালরঙ্গা ভবনগুলো এখনও প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন। যে ভবনগুলো আজও সেই আমলের রাজকীয় স্থাপত্যশৈলীর কথা মনে করিয়ে দেয় আজকের তরুণ শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বেশ কয়েকটি নতুন ভবনও রয়েছে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে লাগানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
কী নেই- প্রতিটি বিভাগে চালু করা হয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। শিক্ষকদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ। প্রতিটি বিভাগে রয়েছে সুদৃশ্য কম্পিউটার ল্যাব। নতুন গবেষণা আর তথ্য বিনিময়ে বহির্বিশ্বের সাথে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগে দেওয়া হয়েছে ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবাও।
এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে ঘরে বসেও কলেজের যাবতীয় বিজ্ঞপ্তি ও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এজন্য কলেজের একটি নিজস্ব ডাইনামিক ওয়েবসাইট রয়েছে। আর রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন সংবাদ ও সংবাদযোগ্য তথ্য প্রচারের জন্য চালু হয়েছে ‘রাজশাহী কলেজ বার্তা’ (www.rcbarta.com) নামে নিজস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এছাড়াও কলেজ পরিচালিত অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপ(web.facebook.com/RajshahiCollegeOfficial)|
কলেজের সুবিশাল গ্রন্থাগারে এখনও প্রাচীন জ্ঞান ভাণ্ডার বলে সারা দেশে সুপরিচিত। যেখানে ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছাড়াও নিত্যনতুন বইসমূহ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের শরীর চর্চার জন্যে রয়েছে আধুনিক ব্যায়ামাগার ও নামাজের জন্য দ্বিতল মসজিদ। শহরের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাস। ছাত্র-ছাত্রীদের অনায়াসে যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহা. হবিবুর রহমান জানান, কলেজের ৯১টি ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর লাগানো হয়েছে। শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে ৪৫৫টি কম্পিউটার। তাছাড়া বিশেষায়িত শ্রেণিকক্ষ (বিজ্ঞান ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব) রয়েছে ২৩টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর মধ্যে টানা তৃতীয়বারে মত সেরা কলেজের স্বীকৃতি পেয়েছে রাজশাহী কলেজ।
সেরার স্বীকৃতি পাওয়ার পর রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। তারা জানেন, মুকুট অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। তাই তাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আগামীতে থাকবে বলেও জানান অধ্যক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
এসএস/এমজেএফ