কোচিং শেষে বাইরে বসে থাকা প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেই তালা খুলে শিক্ষার্থীদের বের করে দিচ্ছেন।
প্রশাসনের চোখে ধুলি দিয়ে এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কোচিং।
অথচ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে গত ২৯ মার্চ থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২ এপ্রিল শুরু হয়ে এই পরীক্ষা শেষ হবে ১৪ মে। এই পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৪১ হাজার ২৭৮ জন।
তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৯ মার্চ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত রাজশাহীসহ গোটা দেশের কোচিং সেন্টারই বন্ধ থাকার কথা। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর সাত দিন আগে থেকেই কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তা কেউ মানছেনা। কায়দা-কৌশল করে পরীক্ষার মধ্যেও কোচিং সেন্টারগুলো খোলা রাখা হয়েছে।
এনিয়ে ১ এপ্রিল বিকেলে রাজশাহীর মালোপাড়া এলাকায় অভিযানও পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। এ সময় মালোপাড়া এলাকার দু’টি কোচিং সেন্টার মুচলেকা দিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। ওইদিন এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে তারপর দিন থেকে আবারও জেলা প্রশাসন ও মানুষের অগোচরে কোচিং সেন্টারগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাওয়া যায়নি উত্তরের এই বিভাগীয় শহরে।
রাজশাহীর ‘কোচিংয়ের হাট’ হিসেবে পরিচিত মালোপাড়া ও কাদিরগঞ্জ গ্রেটার রোডে গিয়ে দেখা যায়, ইউসিসি কোচিং সেন্টারের সামনে বন্ধের নোটিশ ঝুলছে।
প্রবেশ করলে অভ্যর্থনা কক্ষের দায়িত্বরত এক নারী কর্মকর্তা বললেন, ১৪ মে’র পর আবার ক্লাস শুরু হবে। পাশে ট্যালেন্ট প্রাইভেটও বন্ধ ছিল। তবে তা কেবল বাইরে থেকেই।
ভেতরে কৌশলে খোলা ছিল। শিক্ষার্থীরা আগের মত একসঙ্গে এসে জটলা করছে না। একে একে গিয়ে কোচিং সেন্টারের বেঞ্চে বসে পড়ছে। বাইরে থেকে বন্ধ থাকায় বোঝার উপায় নেই যে, ভেতরে কোচিং চলছে। এ সময় ছবি তুলতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা উত্তর দিতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি শিক্ষর্থীরাও।
রাজশাহীর মালোপাড়া ও কাদিরগঞ্জ ছাড়াও ঘোষপাড়া ও রাজারহাতা এলাকায় গিয়েও বাইরে থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ পাওয়া গেছে। দু-একটি কোচিং সেন্টার ব্যানার টাঙিয়ে বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছে। সেগুলোতে ভেতরে ঢোকার সুযোগ মেলেনি।
এদিকে সরেজমিনে কোচিং সেন্টারগুলো বর্তমানে অবস্থা জানতে গিয়ে দেখা যায় রাজশাহী শহরে পাল্লা দিয়ে এই ধরনের কোচিং সেন্টারগুলো গড়ে উঠছে।
অলি-গলিসহ মহানগরীর বড় বড় বাণিজ্যিক ও খ্যাতনামা স্থান যেমন নগর ভবন, লক্ষ্মীপুর মোড়, মহিলা কলেজরোড, নিউমার্কেট, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, কাজলা, কাটাখালি এলাকাগুলোতে যেন কোচিং সেন্টারের ছড়াছড়ি। এগুলোর মধ্যে রেটিনা, ক্লাসিক ,সাফল্য ,ইন্টার এইড ,ওয়েমার্ক ,জিনিয়াস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
অভিযোগ রয়েছে এরা শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। যে শিক্ষা স্কুল বা কলেজের দেওয়ার কথা ছিল তা এখন কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরাও জড়িত রয়েছেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, এমন এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারে অভিযান চালানো হয়েছিল। তারা মুচলেকা দিয়েছে আর কোচিং খুলবেন না। এরপরও যদি আবার কেউ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিং সেন্টার খোলা রাখেন তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৮
এসএস/এএটি