বেশ রাগান্বিত স্বরে বলতে শুরু করলেন, ‘সরকারকে ৫ দিন সম্মান দেখিয়ে কোচিং বন্ধ রেখেছিলাম। অথচ কলেজ শিক্ষকরা দেদারছে পড়াচ্ছে।
এ সময় তার সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরাও হেসে হেসে সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (০৫ এপ্রিল) সকাল ১১ টার। স্পট নগরীর বাউন্ডারি রোড এলাকা। নাঈমের কোচিং সেন্টারে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং করেন।
শুধু যে এ কোচিং সেন্টারেই সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলাকালে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। বাউন্ডারি রোডের কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ টি কোচিং সেন্টার একই পন্থা অবলম্বন করে মজেছে কোচিং বাণিজ্যে।
একই ভাবে নগরীর গুলকিবাড়ী, জিলা স্কুল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের নামে টিউটোরিয়াল হোমগুলোও চালু রয়েছে। নগরীর নতুন বাজার, নাহা রোড, রামবাবু রোডের কোচিং সেন্টারগুলোরও একই অবস্থা।
এগুলোর কোনোটিতে ক্লাস বন্ধ আবার কোনোটিতে ক্লাস চলছে পুরোদমে। সব ক’টিতেই চলছে অফিসিয়াল কার্যক্রম। তবে রিফ্লেক্স, আইকন, ইনডিকেটর, ইউসিসি, ইপিপিসহ নামি-দামি অনেক কোচিং সেন্টার তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কোনো কোনো কোচিং সেন্টারের অফিসেও নোটিশ ও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বুধবার (০৪ এপ্রিল) বিকেলে ও বৃহস্পতিবার (০৫ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর এসব এলাকা ঘুরে সরেজমিনে এমন ঘটনা প্রবাহই চোখে পড়লো।
জানা যায়, নগরীর কোচিং পাড়া হিসেবে পরিচিত বাউন্ডারি রোড, নাহা রোড, নাটক ঘর লেন, নতুন বাজার ও রামবাবু রোডে রয়েছে প্রায় দু’শতাধিক কোচিং সেন্টার।
সরকারি নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসব কোচিং সেন্টারগুলো জমজমাট ব্যবসা চালাচ্ছে। এসব কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও ভিড় দেখা গেছে।
নগরীর নাহা রোডের ওসমান ভবনে নাজমুল ইংলিশ একাডেমি ও মাইলস্টোন টিউটোরিয়াল হোম এবং একই এলাকার স্বাধীন প্রাইভেট সেন্টারে শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন।
বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। এসব কোচিং শিক্ষকদের পড়ার তালিকায় ইংরেজি, গণিতসহ অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে।
সরকারি নির্দেশনার পরেও কোচিং সেন্টার খোলা রাখার বিষয়ে নাজমুল ইংলিশ একাডেমির পরিচালক নাজমুল হুদা খান দাবি করেন, ‘১০ দিন কোচিং বন্ধ রেখেছিলাম। আজ খুলেছে। ’
এরপর কথা ঘুরিযে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার চিঠি আমাদের জন্য না, এটা প্রাইভেট প্রোগ্রাম। ’
একই বিষয়ে স্বাধীন প্রাইভেট কোচিং সেন্টারের পরিচালক এম এস শাহীন বলেন, ‘আমি ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়াচ্ছি। এটা অবৈধ না। ’
নগরীর রামবাবু রোড এলাকার কানাডা স্কয়ার ভবনের তৃতীয় তলায় টাঙ্গাইলের শাহীন শিক্ষা পরিবার অভিনব কাণ্ডের মাধ্যমে কোচিং সেন্টার খোলা রেখেছে।
তাদের স্কুল ও কোচিং সেন্টার পাশাপাশি হওয়ায় তারা কোচিং সেন্টার বন্ধের নোটিশ দেয়ালে ঝুলিয়েছে। তবে ভেতরে ভেতরে তাদের কোচিং বাণিজ্য চলতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে নিজের পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে এক শিক্ষক বলেন, ‘ওপরের লেভেলে ম্যানেজ করেই কোচিং চলছে। ’
সূত্র মতে, গত মঙ্গলবার (০৩ এপ্রিল) জেলার গফরগাঁওয়ে মডার্ন একাডেমি, বিদ্যাপীঠ কোচিং সেন্টার ও স্টার লাইট কোচিং সেন্টারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পরে এ তিনটি কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এসব কোচিং সেন্টারের পরিচালকসহ ১২ শিক্ষক মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান।
তবে জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় কোচিং সেন্টার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোনো তৎপরতা না থাকায় প্রকাশ্যেই তাদের কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার জানামতে সব কোচিং সেন্টারই বন্ধ রয়েছে।
‘তবে আপনার দেওয়া তথ্য মোতাবেক আমরা কাজ করবো। কোনো কোচিং সেন্টার খোলা থাকলে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৮
এমএএএম/এমএ