বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ক্ষমতাসীন নেতা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের শেল্টার। প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অনেকে এমন তথ্য দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্লাসভেদে ৫ম থেকে ৮ম এবং ৯ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ছাড়াও মাসিক ফি’তেও প্রতিষ্ঠান ভেদে রয়েছে টাকার অংকে তফাৎ।
ভালো ফলাফলের নিশ্চয়তা নিয়ে ব্যাচ করে পড়ানো চলছে প্রতিদিন। একেকটি ব্যাচে ২০/২৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয়। কোচিং সেন্টার বন্ধে সরকারি নির্দেশনার পর কৌশল পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে জেলা প্রশাসন তদারকি রাখার দাবি করলেও বাস্তবে ঠিক এর উল্টো।
শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে কোচিং করানো হয়। সপ্তাহে চারদিন, কোনোটিতে তিনদিন পড়ানো হয়। সপ্তাহের ক্লাসের উপর শুক্রবার নেওয়া হয় পরীক্ষা।
সিলেটের লামাবাজার উদ্যম-৭ বাসায় অবস্থিত নিউক্লিয়াস কোচিং সেন্টারের কর্মকর্তা জুয়েল আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবারে পড়ানো হয় এখানে। আজও ক্লাস আছে বিকেল সাড়ে ৩টায়। শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে সব সময়। চাইলে যে কেউ আজই ভর্তি করতে পারবেন। দিন ও সন্ধ্যা- দুই শিফটে পড়ানো হয় সপ্তাহে তিনদিন। শুক্রবার নেওয়া হয় পরীক্ষা।
একই ভবনে অবস্থিত প্রয়াস কোচিং সেন্টারের রুবেল রায় বলেন, এখানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়। যেকোনো দিন ১ হাজার টাকা নিয়ে এলে ছাত্রভর্তি করা যাবে। মাসে দিতে হবে আরো ১ হাজার। প্রতি শুক্রবার পড়ানোর উপর নেওয়া হয়।
ইএমপি কোচিং সেন্টারের সাজন নামে এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, কোচিং চলমান থাকলেও তারা নবম-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শুধু গণিত বিষয় পড়ান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর লামাবাজার এলাকার এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া তার এক ভাতিজিকে ৪ হাজার টাকায় ভর্তি করিয়েছেন। সপ্তাহে চারদিন পড়ানো হয় এখনো। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক ভাতিজিকে পড়ান প্রয়াস কোচিং সেন্টারে। ভর্তির জন্য দিয়েছেন এক হাজার এবং মাসে আরো এক হাজার করে দিতে হয়।
সরকারি নির্দেশনার পরও সিলেটে কোচিং সেন্টার না রাখার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু শাফায়াৎ মুহম্মদ সাহেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর কোচিং সেন্টারগুলো তদারকিতে একটি টিম করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জিব কুমার সিংহকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই টিম মাঠে কাজ করছে। তার সঙ্গে রয়েছেন দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এছাড়া উপজেলাগুলোতে ইউএনও-রা তদারকি করছেন। এরপরও কোনো কোচিং সেন্টার চলমান থাকলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন বলেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকায় মদন মোহন কলেজের প্রধান ফটকের বিপরীতে উদ্যম আবাসিক এলাকায় একই স্থানে প্রয়াস, নিউক্লিয়াস, ইএমপিসহ রয়েছে বেশ ক’টি কোচিং সেন্টার। এগুলো এখনো বন্ধ হয়নি।
নগরীর হাওয়া পাড়ায় রেডিয়াম, আম্বরখানা ও চৌহাট্টা এলাকা, উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালেও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গমনাগমন দেখা গেছে।
এছাড়া শিক্ষার্থী ভিড়াতে চটকদার বিভিন্ন কোচিং প্রতিষ্ঠানের চটকদার বিজ্ঞাপনী ব্যানার-ফেস্টুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ও নগরীর আনাচে কানাচে ঝুলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৮
এনইউ/এএ