ভুক্তভোগীরা বলছেন, কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফি নিচ্ছে ইউসিসি। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতিসহ না অভিযোগ থাকলেও প্রাচীন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে কোচিং সেন্টারটি।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ অর্থাৎ গ ইউনিটে ভর্তির ক্ষেত্রে ইউসিসি নিচ্ছে ১৭ হাজার টাকা, ইউনিএইড সাড়ে ১৩ হাজার টাকা, প্যারাগন কোচিং সেন্টারে ১৬ হাজার টাকা, সাইফুরস’ কোচিং সেন্টারে ১৪ হাজার টাকা এবং আইকন কোচিং সেন্টার নিচ্ছে ১৬ হাজার টাকা।
কলা কিংবা মানবিকী অনুষদে খ ইউনিটের জন্য ইউসিসি নিচ্ছে ১৫ হাজার টাকা, ইউনিএইড সাড়ে ১৩ হাজার টাকা, প্যারাগন কোচিং সেন্টারে ১৩ হাজার টাকা, সাইফুরস’ কোচিং সেন্টারে ১২ হাজার টাকা।
বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের জন্য ১৬ হাজার টাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি করছে ইউসিসি। আর ইউনিএইড সাড়ে ১৩ হাজার, প্যারাগন কোচিং সেন্টার ১৪ হাজার এবং সাইফুরস’ কোচিং সেন্টার নিচ্ছে ১৩ হাজার টাকা।
অন্যদিকে এই তিনটি বিভাগের সঙ্গে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিট যোগ করে ২০ হাজারের বেশি কোর্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘গ’ ইউনিট, ‘ঘ’ ইউনিট ও ‘ক’ ইউনিট এবং ‘ঘ’ ইউনিট যোগ করে ইউসিসি নিচ্ছে ২৬ হাজার টাকা করে। যা প্যারাগনে ২৩ হাজার ও ১৯ হাজার এবং সাইফুরস’ নিচ্ছে ১৮ হাজার টাকা করে।
শুধু কোচিং ফি বেশি রাখা নয়, ইউসিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকারও। এ নিয়ে এর আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি জালিয়াতি করে মেধা তলিকায় প্রথম সারিতে থাকা অভিযুক্তদের অধিকাংশই ইউসিসি থেকে কোচিং করা। যাদের ছবি ইউসিসি প্রকাশিত ভিডিও ও পোস্টারেও রয়েছে।
ফার্মগেটে ইউসিসি কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দিকের ব্যাচগুলোতে ভর্তি হতে দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে আসছেন। কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন, প্রসপেক্টাস দেখছেন তারা। ফি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে নানা অফারের কথাও বলছেন কোচিং সেন্টারে কর্মরতরা।
কোর্স ফি বেশি দেখে ভর্তি হননি কিশোরগঞ্জ থেকে আসা সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া আবু নাঈম। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ফার্মগেটে এসে যত কোচিংয়ে গেলাম সবচেয়ে বেশি টাকা রাখছে ইউসিসি। কোথায় ভর্তি হবো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসিসির পরিচালক কামাল উদ্দীন পাটোয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, একেক কোচিংয়ে একেক রকম ফি। আমাদের এই ফি বেশি নয়। এখন গ্যাস-বাসা ভাড়া সবকিছুই বেশি। এসব বিষয় সমন্বয় করেই এই নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে গত ২৬ ডিসেম্বর অবৈধভাবে পোস্টার লাগানোর দায়ে ইউসিসিসহ ছয় কোচিং সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরপরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার পোস্টার টানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে কোচিং সেন্টারটি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই বাতিল হাইকোর্ট স্থগিত করে দিয়েছেন।
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্তদের ছবি ছাপিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কোচিং করেছিল বলেও প্রচারণা করেছে ইউসিসি। ব্যবসার জন্যেই কোচিং সেন্টারটি এ ধরনের কাজ করছে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে কামাল পাটোয়ারী বলেন, একজন ছাত্র একাধিক জায়গায় কোচিং করতে পারে। একদিনও কোচিং করে থাকে অনেকে। আমাদের ছাত্রদেরই ছবি ছাপানো হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগটি প্রমাণ হয়নি বলে দাবি করেন কোচিং সেন্টারটির পরিচালক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৮
এসকেবি/এমএ