ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

নানা অভিযোগের সত্যতা, তবুও বহাল শিক্ষক

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
নানা অভিযোগের সত্যতা, তবুও বহাল শিক্ষক অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বাহার উদ্দিন আকন্দ

সিলেট: বিদ্যালয়ের তহবিল আত্মসাৎ, শিক্ষিকার মাতৃত্বকালীন বেতন-ভাতা লুট, ভুয়া রেজুলেশনে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বেতন বৃদ্ধি এবং অনিয়ম করে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত সিলেট মির্জাজাঙ্গাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাহার উদ্দিন আকন্দ।

তদন্তে এসব অভিযোগের সবগুলোরই সত্যতা মিলেছে। অনেক অভিযোগ অকপটে স্বীকারও করেছেন অভিযুক্ত এই শিক্ষক।

কিন্তু তাতেও শোকজ নোটিসেই আটকে গেছে তার শাস্তি। এখন এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন অন্যান্য শিক্ষকরা। মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে ক্লাস বর্জন করে প্রধান বাহারের অপসারণ ও শাস্তি দাবি করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। সিটি করপোরেশন পরিচালিত এ বিদ্যালয়ে ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বাহার। আর এই আট বছরেই অনিয়ম-দুর্নীতির ষোলকলা পূর্ণ করে ফেলেছেন তিনি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশনে সাত মাসে দুইবার নিজের বেতন বৃদ্ধি করিয়েছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখা থেকে পৃথক বেতন নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষিকা রেহেনা বেগমের মাতৃত্বকালীন ছয় মাস বিনা বেতন দেখিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন এ শিক্ষক। সেজন্য তিনি রেহেনার স্বাক্ষরও জাল করেছেন।

শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে বাহার সব আত্মসাৎ করেছেন। নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও মিলে এর সত্যতা। তাতে দেখা যায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে আয় হয় আট লাখ ৫০ হাজার ৬৮৫ টাকা। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৮ টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। অবশিষ্ট তিন লাখ ১৩ হাজার ৭২৭ টাকার কোনো হদিস নেই।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন আটজন শিক্ষক-কর্মচারী। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিলেট টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সেইসঙ্গে পৃথক তদন্ত করে সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় কমিশনার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এসব তদন্ত প্রতিবেদন ওই শিক্ষকের পুরোই বিপক্ষে যায়।
 
পরে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এক স্মারকে বাহারের রেজুলেশন জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, সাত মাসের ব্যবধানে দু’টি ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়ন ও টাকা উত্তোলনের সত্যতা তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান তৎক্ষালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সৈয়দ মোহাম্মদ আমিনুর রহমান।  

এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষককে চারটি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। কিন্তু এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে, এতো দুর্নীতির পরও প্রধান শিক্ষকের বহাল থাকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
 
তিনি বলেন, তদন্তে সব অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর এজন্য জরুরি সভা আহ্বান করবো আমি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু বাংলানিউজকে বলেন, একজন শিক্ষক প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শাখা থেকে দুইবার বেতন পান না। কিন্তু শিক্ষক বাহার এই অনিয়ম করেছেন। তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
 
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক বাহার উদ্দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখা থেকে পৃথক বেতন নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে ভুল হতেই পারে। ভুল সংশোধনের চেষ্টা করেছি। এটার জন্য সরি। এটা আমার ভুল ছিল। এছাড়া সাত মাসের মধ্যে দু’বার ইনক্রিমেন্ট লাগালেও বেতন তুলিনি আমি। বিষয়টি আমি না বুঝে করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
এনইউ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।