ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বশেমুরবিপ্রবি’র আইআর বিভাগের চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯
বশেমুরবিপ্রবি’র আইআর বিভাগের চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

গোপালগঞ্জ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (আইআর) চেয়ারম্যান খন্দকার মাহমুদ পারভেজকে আগামী তিন কার্য দিবসের অপসারণ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আইআর বিভাগের সামনে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নূরউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে অনাস্থাপত্র দেন।

জানা যায়, আইআর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদ পারভেজ সদ্য পদত্যাগী ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের ভাতিজা।

অনাস্থাপত্রে শিক্ষার্থীরা জানান, অযোগ্যতার সত্ত্বেও খন্দকার মাহমুদ পারভেজ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন সেগুলোর একটিও তার নেই। তিনি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। পরে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এক পর্যায়ে তাকে আইআর বিভাগের চেয়ারম্যানও করা হয়।

প্রথম থেকেই তিনি ক্লাসে পাঠদানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। তাই তিনি যেসব কোর্স নিয়েছেন সে বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ ধারণা পাইনি। এছাড়াও তিনি প্রতিটি কোর্স ৭-৮টি ক্লাস নিয়েই শেষ করেছেন। এ বিষয়ে প্রথমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও তার চাচা সদ্য পদত্যাগী ভিসি প্রফেসর ড. নাসিরউদ্দিনের ক্ষমতাবলে অভিযোগকারীদের বহিষ্কার ও একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করেন।

তিনি তৃতীয় ব্যাচের ৩৫ জন শিক্ষার্থীর অ্যাসাইনমেন্টে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া শূন্য নম্বর দেন। এছাড়া দ্বিতীয় ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে শূন্য নম্বর দিলে তারা তাদের ভুল জানতে চাইলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেন।

তিনি দরিদ্র তহবিল থেকে সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে চেকের পরিবর্তে ডকুমেন্ট ছাড়া নিজের ইচ্ছামতো টাকা দেওয়ায় তার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়া অনেক দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী আর্থিক সাহায্যের জন্য তার দ্বারস্থ হলে তাদের টাকা না দিয়ে তিনি অপদস্থ করেছেন।  

ওই শিক্ষককে ক্লাসে পাঠদান বিষয়ক প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর না দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, ‘তুই এসে পড়, জানালা দিয়ে ফেলায় দেব, কান ধরে ভিসি সাহেবের কাছে নিয়ে যাবো এবং তিনি বহিষ্কার করবেন। ’ 

এছাড়া শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের অফিস সহকারীর মাধ্যমে বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, যা ছাত্রীদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

এদিন দুপুরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে অনাস্থাপত্র ছাড়াও ২০টি দাবি সম্বলিত একটি পত্রও দাখিল করেছে। তাদের এসব দাবিগুলো হলো- আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক এবং নন একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাউকে যেন কোন শিক্ষকের ব্যক্তিগত রোষানলে না পড়তে হয় সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে হবে, চলমান সেমিস্টারে খন্দকার মাহমুদ পারভেজ যে কোর্সগুলো নিচ্ছেন সেই কোর্সগুলোর মিডর্টাম পরীক্ষার খাতা তার পাঠদান ও পরীক্ষার প্রশ্নের ওপর বিবেচনা করে মূল্যায়ন করতে হবে, ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য পরিহার করে সর্বোচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বিভাগের আসন সংখ্যা কমিয়ে কোটাসহ সর্বোচ্চ ৫০ জন করতে হবে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকসুলভ আচরণ করতে হবে, চলমান সেমিস্টারে তার কোর্সগুলো সম্পূর্ণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করতে হবে, পরীক্ষার ফলাফল অতি দ্রুত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে হবে, আইআর ডিপার্টমেন্টের অফিস সহকারী রমজানকে বিভাগ থেকে অপসারণ ও শাস্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে, আইআর বিভাগের ক্লাসরুম সংখ্যা ‌অপর্যাপ্ত থাকায় একাডেমিক ভবনে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম দিতে হবে, ক্লাসরুমগুলো নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, ক্লাসরুমগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিটি ক্লাস রুমে সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে, ডিপার্টমেন্টের সেমিনার লাইব্রেরির জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে হবে, ভালো পাঠদান সম্পন্ন করার জন্য ক্লাস রুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সিস্টেম ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে, পড়াশোনার সুবিধার্থে ক্লাসরুমগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করতে হবে, আইআর’র ক্লাসরুম বর্তমানে টিনশেডে অবস্থিত এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে, ডিপার্টমেন্টের সাংস্কৃতিক চর্চা এবং বিভিন্ন কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি’র প্রচলন করতে হবে, একজন যোগ্য প্রফেসরকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, প্রথম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারে খন্দকার মাহমুদ পারভেজ তিনটি কোর্স নিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষার খাতাগুলো পুনরায় বিবেচনা সাপেক্ষে মূল্যায়ন করতে হবে।

এছাড়া, আইন, কৃষি, প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান ও ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এদিন তাদের বেশ কিছু দাবি রেজিস্ট্রারের কাছে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।