ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রযুক্তি-ই গড়বে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ: ড. সাজ্জাদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
প্রযুক্তি-ই গড়বে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ: ড. সাজ্জাদ

ঢাকা: বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, প্রযুক্তি আমাদের অংশগ্রহণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করছে। আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে এই প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা সমৃদ্ধ, স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। যেখানে অস্বচ্ছতা বা দুর্নীতির কোনো সুযোগ থাকবে না।
 
 

শুক্রবার (০৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (এআইইউবি) কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ভিআর কন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর অংশগ্রহণমূলক সমাজে কোনো অস্বচ্ছতা থাকবে না।

সবাই কাজের পেছনে ছুটবে। সব কাজই হয়ে যাবে অনলাইনে, মেশিন নির্ভর। অনলাইনে বা মেশিনে ভুল বা দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকবে না। অংশগ্রহণমূলক এ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

‘সমসাময়িককালে আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রযুক্তিখাতে বেশ ভালো করছে। চতুর্থশিল্পব সামনে, যা হবে ইন্টারনেট অব থিংসকে (আইওটি) কেন্দ্র করে। বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির চিত্র পাল্টে দেবে। এক্ষেত্রে আমাদের আট কোটি তরুণকে তৈরি করতে পারে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো-ই। তাদের সে সুযোগ আছে। কারণ তরুণদের দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে আমরা দেশে-বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে নেতৃত্ব দিতে পারবো। ’

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ভিশন ২০৪১’ এর কথা উল্লেখ করে ইউজিসি সদস্য ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমাদের বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারের মতো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটা ফ্রেমওর্য়াক দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বে পৌঁছাতে আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় ১৫ হাজার ডলারের বেশি হতে হবে।

আয়োজিত অনুষ্ঠান।
‘এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। তথ্যপ্রযুক্তিখাতে ভালো করলে এবং যোগ্য করে তরুণদের গড়তে পারলে তা করা সম্ভব হবে। আমরা তা পারবো। কারণ আমাদের তরুণরা মেধাবী। তাদের মোটিভেশন করতে পারলে তারা সবই পারে। ’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠছে। কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর আগে সেটি সম্ভব ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

‘এখন আমরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অটোমেটেড রিয়েলিটি, মিক্সড রিয়েলিটি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কথা বলছি। আমরা কাজ করছি ডাটা অ্যানালাইসিস, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংসসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অত্যাধুনিক বিষয় নিয়ে। কারণ আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এই শিক্ষাবিদ বলেন, পৃথিবীতে যা কিছু ভালো তরুণরাই করে দেখিয়েছে। আমাদের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ যুবক, তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে উঠতে হবে। কারণ আমাদের এখন প্রচুর সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষকরা যেমন তাদের নির্দেশনা দেবেন, শিক্ষার্থীদেরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কী করতে চাও- সে বিষয়টাকে ফোকাস করে এগিয়ে যেতে হবে।

অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পৃথিবী বদলে গেছে। এই গ্লোবাল ভিলেজে এখন সব কিছুই ইন্টার-কানেক্টিং। এই কানেক্টেড পৃথিবীতে আমাদের রিসার্চ কোলাবরেশন সোসাইটি গড়ে তুলতে হবে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউজিসি সদস্য বলেন, আমি অনুরোধ করবো দেশের পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে, তারা যাতে আইসিটি বেজড রিসার্চ বাড়ায়। আর তা অবশ্যই মানসম্মত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।

আয়োজিত অনুষ্ঠান।
এক্ষেত্রে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের ওপরও জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।  

বাংলা ভাষায় গবেষণাপত্র প্রকাশের উপর গুরুত্বারোপ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের এই গবেষক বলেন, পৃথিবীর প্রত্যেক উন্নত দেশই নিজেদের ভাষায় সব কিছু করে। এক্ষেত্রে আমাদেরও বাংলা ভাষায় গবেষণা পেপার প্রকাশ করতে হবে।

‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজের দেশের যত সমস্যা রয়েছে তা গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বাতলে দিতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্ভাবন করবে যা মানুষের কল্যাণ হয়, দেশের উন্নয়ন হয়। আর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়বে বিদেশেও। ’

তিনি বলেন, আমাদের কৃষিবিশ্ববিদ্যালগুলো ভালো করছে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে তারা নিত্যনতুন গবেষণা করে যাচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মানসম্পন্ন রিসার্চ করবে, ইনোভেশন করবে এবং ওয়েলথ জেনারেট করবে। আমরা সে বিশ্বাস করি। এভাবে সবার অবদানেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের আয়োজনে ‘ফার্স্ট ভার্চুয়াল কনফারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এআইইউবির উপাচার্য ড. কারমেন জেড ল্যামাঙ্গার। এতে  বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারের আইসিটি বিভাগের প্রকল্প পরিচালক আবদুল হাই।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এআইইউবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর অধ্যাপক ড. তফাজ্জল হোসেন এবং ইনোভেশন ফোরামের আরিফুল ইসলাম অপু এবং সম্মেলনের টাইটেল স্পন্সর রাইজ আপ ল্যাবসের প্রধান নির্বাহী এরশাদুল হক।

পরে সেমিনারের বিভিন্ন সেশনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নানা বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
এমএ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।