ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অবশেষে জাবিতে ভর্তি হতে পারছেন ‘হোটেল শ্রমিক’ শাকিল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
অবশেষে জাবিতে ভর্তি হতে পারছেন ‘হোটেল শ্রমিক’ শাকিল

লালমনিরহাট: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত মেধাবী হোটেল শ্রমিক শাকিলের পাশে দাঁড়িয়েছে অনেকেই।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভর্তির প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন শাকিল।  

শাকিল লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি গ্রামের ভূমিহীন হোটেল শ্রমিক মমিনুল ইসলামের ছেলে।

তিনি আদিতমারী স্টোরপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের নাতি।  

স্থানীয়রা জানান, ভূমিহীন মমিনুল ইসলাম এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসারের খরচ যোগাতে হোটেল শ্রমিকের কাজ করেন। আর্থিক অনটনের কারণে বড় ছেলে শাকিলকে আদিতমারী স্টোরপাড়া গ্রামে তার নানার বাড়িতে রেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই চা বিক্রেতা নানা আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে থেকে নানার চায়ের দোকানে সহায়তার পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন শাকিল।  

আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলেও অদম্য মেধাবী শাকিল রানা শতবাঁধা অতিক্রম করে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখাপড়া। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুতেই লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলে প্রতিবেশিদের সহায়তায় চালিয়ে নেয় লেখাপড়ার খরচ। আদিতমারী হাসপাতাল গেটে নানা চায়ের দোকানে কাজ করেই ২০১৭ সালে সরকারি আদিতমারী জিএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.০৯ নিয়ে পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় শাকিল রানার। ভর্তি হন রংপুর সরকারি কলেজে। সেখানে টিউশনি করে ২০১৯ সালে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪.২৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করে নিজেকে প্রশাসনিক ক্যাডার করার আগ্রহ বেড়ে যায় তার। জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭২তম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮৩৩তম মেধাক্রমে উত্তীর্ণ হন।  

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হতে মনস্থির করেন শাকিল রানা। জাবিতে ভর্তি ফি ৮ হাজারসহ আনুসঙ্গিক মিলে ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। ভর্তির টাকা যোগাতে কিছুদিন ধরে নানা আব্দুস সাত্তারের চায়ের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভর্তির দিনক্ষণ নির্ধারণ হলেও যোগাড় হয়নি প্রয়োজনীয় টাকা। ফলে অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার। নাতির ইচ্ছা পূরণ করতে জাবির ভর্তির টাকা যোগাতে বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ নিতে ছুটছেন নানা আব্দুস সাত্তার। সঞ্চয় ছাড়া কোনো এনজিও ঋণ না দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।

এ নিয়ে রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলানিউজে ‘জাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত হোটেল শ্রমিক শাকিলের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর অনেকেই তাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। জাবির প্রো-ভিসি, জাবির বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিত্তবান ব্যক্তি বিকাশে ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যেমে তাকে অর্থ সহায়তা দেন। যে টাকা নিয়ে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাবিতে ভর্তির জন্য বাড়ি ত্যাগ করেন শাকিল রানা।

শাকিলের নানা আব্দুস সাত্তার ও বাবা মমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চিন্তাও করতে পারিনি এভাবে তার ভর্তির টাকা যোগাড় হবে। তার ভর্তির টাকা যোগাড় নিয়ে আমাদের খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল। যারা শাকিলকে সহযোগিতা করেছেন সৃষ্টিকর্তা তাদের মঙ্গল করবেন।  

শাকিল রানা বাংলানিউজকে বলেন, সমাজে এখনো ভাল মানুষ আছেন। যারা আমার মতো হোটেল শ্রমিক শাকিলের স্বপ্ন পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।