ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

১৬তম বর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মহিউদ্দিন রিফাত, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
১৬তম বর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): ক্ষুদ্র পাঠশালা থেকে ব্রাহ্ম স্কুল, স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশেষ অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রয়েছে শতাব্দীর ইতিহাস। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা দেড়’শ বছরেরও পুরাতন দেশের প্রাচীন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতীতকাল থেকেই বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতি, আন্দোলন-সংগ্রাম ও ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয় ১৬তম বর্ষে পদার্পণ করছে।

২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের পর খুব কম সময়ের মধ্যেই দেশের উচ্চ শিক্ষার আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সবার আগ্রহের জায়গায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যার কারণে প্রতিবছর ভর্তি পরিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষা, ক্রীড়া, দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য লালন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো অবস্থানের কারণে সগৌরবে মাথা উঁচু করে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, ৬২'র শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ৬৬'র ছয় দফা, ৬৮'র এগারো দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে জগন্নাথ কলেজের ছাত্রদের ভূমিকা সামনের দিকে। এই কলেজের ছাত্র শহীদ রফিক ভাষা আন্দোলনের জন্য জীবন দেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালির সাংস্কৃতিক চর্চার আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত। পুরান ঢাকায় অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলা বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসব, শরৎ উৎসব, স্বরস্বতি পূজাসহ নানা ধর্মাবলম্বীদের উৎসব পালন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য উৎসব, সংগীত উৎসব, চলচ্চিত্র উৎসব, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা চারুকলা প্রদর্শনী নিয়মিত হতে দেখা যাচ্ছে। সীমিত সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে নতুন সৃষ্ট সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে।

তবে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলো ছড়ালেও নানা সংকটের মধ্যে এগিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সংকটের তালিকায় আবাসন সমস্যা, সীমিত পরিসরের ক্যাম্পাস, অনুন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, অপ্রতুল গবেষণা কাঠামো, প্রয়োজনীয় ল্যাব সংকট, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিকাশে প্রয়োজনীয় জায়গা না থাকা অন্যতম দিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার নির্মাণ, প্রস্তাবিত আধুনিক ল্যাব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়ায় যে ২০০ একর জমি দিয়েছেন সেখানে নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হলে সব সংকট নিরসন হবে বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে নতুন ক্যাম্পাসের ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ভূমি সংস্কারসহ সেখানে লেক খনন, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎ ও প্রাচীর নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ প্রকল্পের সবকিছু সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন  উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক।

এদিকে গতবছর প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ পনেরো বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে হল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঘুচছে অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নামক ট্যাগ।  

এর আগে ২০ তারিখ ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও লক্ষীপূজার বন্ধ থাকায় ২১ অক্টোবর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ও ভার্চ্যুয়ালভাবে দিনটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে এবং ১১.১০ মিনিটে বেলুন উড়িয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্ধোধন করা হবে। এরপর দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি ঈর্ষণীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্যে এখানে মেধাবীরা ভর্তি হচ্ছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যৌথ প্রচেষ্টাতেই এগিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ মানসম্মত লেখাপড়া, পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়মিতকরণ, শিক্ষকদের জ্ঞান অন্বেষী মনোভাব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি গৌবরজনক স্থান লাভ করতে সক্ষম হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো অবস্থানে ঠাঁই পাচ্ছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৮ সালে ব্রাহ্ম স্কুল নামে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি। ১৮৭২ সালে জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৯০৮ সালে এটি প্রথম শ্রেণির কলেজের রূপ পায়। স্বাধীনতার আন্দোলন, সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।