সাতক্ষীরা: পরস্পর যোগসাজশে জাল কাগজপত্র বানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকরণ শেষে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা সরকারি অর্থ বেতন হিসেবে উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদসহ চার শিক্ষকের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস দীর্ঘ তদন্ত শেষে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ও ১০৯ ধারায় এ মামলার আবেদন করলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় ৯ মার্চ মামলাটি রেকর্ড করেন।
আলোচিত এ মামলাটি দুদক নিজেই তদন্ত করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আলোচিত এ মামলার আসামিরা হলেন- সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের দেলবার মৃধার ছেলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মনিরুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলার নাকতাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ সরদারের ছেলে সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান, সাতক্ষীরা সদরের নেবাখালী গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে সিটি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক শেখ নাসির আহমেদ, গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত ধীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুণ কুমার সরকার এবং আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের মৃত নুর আলী সরদারের ছেলে ও সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু সাঈদ।
সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে জ্যেষ্ঠতার বিধি লংঘন করে জুনিয়র শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জালিয়াতি করে সিনিয়র শিক্ষক বানিয়ে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আবার অনার্স শাখায় নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের তথ্য জালিয়াতি করে ডিগ্রি স্তরের শিক্ষক বানিয়ে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কলেজ-২ ও উপ-সহকারী পরিচালক কলেজ-৩ স্বাক্ষরিত ৭৭০ জন তৃতীয় শিক্ষকের তালিকায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ১২টি বিষয়ে অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ জন শিক্ষকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর এক অভিযোগের ভিত্তিতে মাউশির মহা পরিচালকের নির্দেশে খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গত ১ ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজে তদন্তে আসেন। এসময় অধ্যক্ষ আবু সাঈদ তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানিয়েছেন রাজনৈতিক চাপে এই অনৈতিক কার্যক্রম তিনি করেছেন। একই সময়ে অভিযুক্ত ১২ জন শিক্ষক বলেন, আমাদের প্রকৃত নিয়োগ ও যোগদানের তথ্য জালিয়াতি করে কলেজ প্রশাসন আমাদের ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে তালিকা ভুক্ত করেছেন। আর এই তালিকা ভুক্তির নামে কোটি কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি কলেজের অভ্যন্তরীণ তহবিল তছরুপ, ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন ফি বর্ধিত করণ, উন্নয়ন তহবিল বাবদ গৃহীত অর্থ, ছাত্র ছাত্রীদের সরকারি উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাৎ, সেশন চার্জসহ নানাখাত থেকে বিপুল পরিমান অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। যার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়াও দুর্নীতির গহবরে ডুবে থাকা এই কলেজের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্কের অভিযোগ।
মামলার বাদী দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর শিকদার জানান, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের নানাবিধ দুর্নীতির ঘটনার অসংখ্য অভিযোগ জমা আছে দুদকে। তার দুই একটির তদন্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তদন্ত চলে। এরপর করোনার কারণে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
এসআই