ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

গাজীপুরে আজমতের পরাজয়ের ৩ কারণ

রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
গাজীপুরে আজমতের পরাজয়ের ৩ কারণ

গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের (নৌকা) পরাজয় ঘটবে। কিন্তু এই ভাবনা উল্টে গেল।

ইতিহাস গড়লেন মা-ছেলে।

আজমতের পরাজয় ও জায়েদার জয় নিয়ে গত রাত থেকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। যে যার মতো করে অভিমত জানাচ্ছেন।  

এদিকে আজমত উল্লার পরাজয়ের তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন গাজীপুরবাসী।

তারা বলছেন -  ১) সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা ২) আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল এবং ৩) আজমত উল্লা খানের নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ির কর্মী-সমর্থকরাই ছিল পরাজয়ের অন্যতম কারণ।  

১) সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা

এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর তিনি ৩ বছরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেন তিনি। এছাড়াও অসহায় দরিদ্রসহ বিভিন্ন মানুষকে আর্থিক সহায়তাও দেন তিনি। এভাবে নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন জাহাঙ্গীর আলম। যদিও মেয়র থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। এসময় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয় তাকে। কিন্তু এসব বিষয় শাপেবর হয়ে দাঁড়ায় জাহাঙ্গীরের জন্য। উলটো নগরবাসীর কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। আর সেই জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে জয়ের মুকুট ছুতে পেরেছেন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

২) আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল

সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হযয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এটা সর্বজন বিদিত।  কিন্তু প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে নৌকাডুবি হয়েছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।

কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রথমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানের কাছে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা)। সে হিসেবে জাহাঙ্গীরের তুলনায় ভোটব্যাংক কম আজমতের। আর সেই আজমতকেই প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করে আওয়ামী লীগ।  অন্যদিকে বিএনপির নেতা, কর্মী-সমর্থকরা নৌকার পরাজয় দেখতে ভোট দেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে।

৩) নৌকার ব্যাজে টেবিল ঘড়ির কর্মী-সমর্থক 

এবার নির্বাচনে জাহাঙ্গীর এবং তার মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তার মা জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ছেলেকে নিয়ে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা শুরু করেন। মা-ছেলে ভোট প্রার্থনা করেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে। জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপক কর্মী-সমর্থক ও জনপ্রিয়তা কাল হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের (নৌকা)।  

নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ঘড়ি প্রতীকের তেমন এজেন্ট ছিল না। গোপনে জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী সমর্থকরা নৌকার ব্যাজ গলায় ঝুলিয়ে ভোট দেন এবং টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। দৃশ্যত তারা ছিলেন নৌকার কর্মী, কিন্ত কার্যত তারা সবাই কাজ করেছেন জায়েদা খাতুনের পক্ষে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের এক বাসিন্দা বলেন, আজমত উল্লা খান আগে একবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার আওয়ামী লীগের বোঝা উচিত ছিল গাজীপুরে তার জনপ্রিয়তা কেমন। এবার জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করলে বিপুল ভোটে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হতো। এতে আওয়ামী লীগের লাভ হতো, অন্তত এই পরাজয়টি দেখতে হতো না।  

কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী হয়ত ভোটারদের মন জোগাতে পারেননি। জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী-সমর্থকদের তিনি নিজের মনে করেছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি তারা তাকে ভোট দেবে না। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী-সমর্থকরা আজমত উল্লা খানের পাশে থেকে ভোট দিয়েছে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে। ফলে তার এই পরাজয়।  

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ঠিক গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ৪৮০টি কেন্দ্রে ৫৭৫০৫০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা মেয়র পদে জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি) পেয়েছেন ২৩৮৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা) পেয়েছেন ২২২৭৩৭ ভোট।  

এ নির্বাচনে মেয়র পদে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) ১৬৩৬২ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা) ৪৫৩৫২ ভোট, জাকের পার্টি মো. রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল) ৭২০৬ ভোট, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ) ১৬৯৭৪, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (হাতি) ২৩২৬৫ ভোট ও হারুন অর রশীদ (ঘোড়া) ২৪২৬ ভোট।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫, মে ২৬, ২০২৩
আরএস/এসএএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।