ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে নিহত ১, পুলিশসহ আহত ২০

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৪
সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে নিহত ১, পুলিশসহ আহত ২০

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।

 

এ সময় পুলিশ সদস্যসহ আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত হৃদয় ভূইয়া দুঘঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূইয়ার ছেলে। তিনি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক। ঘটনার পর ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউপি সদস্য পদে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোরগ প্রতীকে আব্দুল আজিজ সরকার ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটগ্রহণ শেষে আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু ৮১১ ভোট পান।  

এ সময় ফলাফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিসাইর্ডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে পুনরায় ভোট গণনার অনুরোধ করেন। পুনরায় ভোট গণনা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে রাজুর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। রাজু প্রিসাইর্ডিং কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় ভোট গণনা করতে দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে রাজু কৌশলে কেন্দ্রের বাইরে চলে যান।

এ বিষয়টি তার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা লোকজনকে উপজেলায় আসতে বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে পুলিশ, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।  

এ সময় কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে হৃদয় ভূঁইয়া ও কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭) গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও আপন, সাখাওয়াত, মফিজুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, রাশেদ ও রিপনসহ ১২ জন আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদয় ভূঁইয়া মারা যান।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল, মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আব্দুস সালাম, কবির হোসেন, নূর মোহাম্মদ, আল আমিন আহত হন। পুলিশ সদস্যদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে রাজু নির্বাচিত হয়। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুনরায় ভোট গণনা করে ফলাফল দেওয়ার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে। এ সময় পুলিশও রাজুর সমর্থকের ওপর গুলি চালায়।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শেষে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এ সময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশের ৮ সদস্য আহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. মুজিবুর রহমান গত বছরের ২০ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে এ পদটি শূন্য হয়। ফলে শনিবার শূন্য পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৪
এমআরপি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।