ঢাকা: জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে প্রতিনিধিত্ব ওঠে আসার জন্য আইনি ব্যবস্থা চায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। একইসঙ্গে সব স্থানীয় সরকারেও একই পদ্ধতি চান তারা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন সুপারিশ করেন বক্তারা।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নির্বাহী কমিটির সদস্য রিপন চন্দ্র বানাই বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থায় অবশ্যই আদিবাসীদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। এটি সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও। সংসদে সংরক্ষিত ৫০টি আসন আছে। এটি শুধু দল নয়, মনোনয়ন দেবে না এখানে। পিছিয়ে পড়া, আদিবাসীসহ যাদের প্রতিনিধি কখনো সংসদে প্রতিনিধি আসেনি তাদের মধ্যে থেকে বাছাই করা। নারী, আদিবাসী, দলিত, চা-শ্রমিক, কৃষকসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকেও প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। স্থানীয় সরকারের ইউপিতে একজন চেয়ারম্যান, তিনজন নারী থাকে। যে ইউপিতে আদিবাসী আছে, সেখানে আদিবাসীদের জন্যও সংরক্ষিত রাখতে হবে, যেখানে আদিবাসীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
আদিবাসী প্রতিনিধি সন্ধ্যা মালো বলেন, আদিবাসী বললে সমতল আর পাহাড়ি একদিকে হয়ে যায়। আমি মনে করি, যদি পিছিয়ে থাকা থেকে শুরু করা যায় তাহলে ভালো হবে। সবাইকে সামনে আনা যাবে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, নির্বাচনে অভিযোগ দিলে নির্বাচন শেষ হলেও সমাধান হয় না। তাই অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে প্রার্থিতা বাতিল করা উচিত। তাহলে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবে রোধ করা যাবে। আমরা যাকেই ভোট দিই না কেন, আমরা যদি নিজের পছন্দের মানুষকে ভোট দিই তাহলে যে নির্বাচিত হতে পারে না, তার কাছ থেকে মার খেতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমনিতেই ভীত। বৃটিশবিরোধী থেকে এই পর্যন্ত আদিবাসীরা কি পরিমাণ নির্যাতিত হয়েছে, যা সবাই জানে। আমরা সমতলের আদিবাসী যারা, তারা পিছিয়ে আছি। আমাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। আমাদের যদি কিছু প্রতিনিধি থাকে, আমাদের অনেক জায়গায় প্রচুর আদিবাসী আছে।
অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার (আসুস) নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাও বলেন, আদিবাসীদের ভোটার তালিকা নতুনভাবে করতে হবে। এজন্য আদিবাসীদের সেই কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে, না হলে সঠিক হবে না। আমরা যখনই কথা বলি, তখন বিভিন্ন ট্যাগ লাগানো হয়। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি কখনোবা জামায়াত বলে ট্যাগ লাগিয়ে মারা হয়। এজন্য আমরা টিকতে পারছি না। এটা আমাদের দুর্বলতা। আমরা শিক্ষিতও নয় সেভাবে, তাই সেভাবে আমরা সাজিয়ে গুজিয়ে কথাও বলতে পারি না। স্থানীয় নির্বাচনের সময় দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়, তাহলে একজন আদিবাসী কি করে নির্বাচিত হবে। নরমাল প্রতীক হতে হবে। নির্দলীয়ভাবে স্থানীয়ভাবে নির্বাচন হতে হবে। কেননা, প্রার্থী ভালো না হলেও দলের কারণে ভোট পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমতলের আদিবাসীদের সমস্যা আলাদা। তাই এখানেও মন্ত্রণালয়ের ডিভিশন হতে পারে। ভূমি কমিশন করা যেতে পারে। ডিগ্রি পাস ছাড়া নির্বাচন না করতে পারলে আমাদের আদিবাসীরা তো পারবে না। কারণ তারা তো পড়াশোনায় পিছিয়ে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রাখা যেতে পারে। আমাদের আদিবাসীদের মধ্যে অনেক নেত্রী আছে, যারা সই করতে পারে না। তবে বক্তব্য শুনলে মনে হবে ডিগ্রি পাস।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও প্রতিবন্ধীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেনির পেশার মানুষের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা তাসফিয়া তারানুম রিধিতা, উইমেন উইথ ডেভেলপমেন্ট’র সহকারী সমন্বয়ক নুর নাহার আলম প্রমুক্ত বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ভোটের আগে পরে সংখ্যালঘুরা ভুক্তভোগী হয়। এই আতঙ্ক বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনৈতিক জায়গায় আদিবাসীদের অংশ নেওয়ার সুযোগও করতে হবে। সারা দেশে দলিত হরিজন আছে এক কোটির মতো। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায়ই দলিত প্রতিনিধি নেই। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের সময় আসে তারপরও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর খোঁজখবর নেয় না। নির্বাচন কেন্দ্র করে হামলা ও ভাঙচুর হয়। দলিতরা দাবি নিয়ে রাস্তায় আসে না, কারণ নির্দিষ্ট দলের ট্যাগ লাগানো হতে পারে। আমরা সবার সাথে বাঁচতে চাই।
বক্তারা আরও বলেন, আগে ভোট না দেওয়ার অভিযোগে ভোটের পর নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। আদিবাসীদের স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আদিবাসী প্রতিনিধি রাখতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আদিবাসীদের ট্যাগ দেয়। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে হবে। এছাড়া আদিবাসীদের এনআইডি কার্ডের অসংখ্য ভুল এবং এই ভুলগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
ইইউডি/এএটি