ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ভোটের মাঠে নতুন মুখ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আনোয়ার-সেলিমের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
ভোটের মাঠে নতুন মুখ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আনোয়ার-সেলিমের

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনের মধ্যে আলোচিত লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ)। নানা কারণে এ আসনকে ঘিরে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা ও জল্পনা-কল্পনা। এখানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির দলীয় প্রার্থী নেই। আছে তাদের জোটের শরিক দলের প্রার্থী। 

নৌকা প্রতীকে লড়বেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের আনোয়ার হোসেন খান। আর ধানের শীষ নিয়ে মাঠে আছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম।

দু’জনেই এই ভোটের ময়দানে নতুন মুখ।  

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসেছে ভোটের আমেজের পাশাপাশি কিছুটা রয়েছে ‘আতঙ্ক’ও। কোনো কোনো এলাকায় সহিংস হয়ে ওঠছে নির্বাচনী মাঠ। প্রধান দুই জোটের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রয়েছে উত্তেজনা।  

নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নেতাকর্মীদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে ‘আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। হয়েছে মামলাও।  

গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন। এসময় তিনি বলেন, এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা ভোটের পরিবেশ নষ্ট করছে।  

প্রশাসনের কাছে এর প্রতিকারও দাবি জানান তরিকত ফেডারেশনের এই নেতা।

এদিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন এলডিপি নেতা সেলিমও। গত ১২ ডিসেম্বর আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোতা মিয়া-ই বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন। তাই ওসির প্রত্যাহার চান তিনি।  

স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের শ্যামপুর মিয়ার বাজারে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ফরিদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন।  

এতে স্থানীয় রাজু, দুলাল, মেহেদী হাসানসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ে ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা বিএনপি ও সহযোগী এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।

ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে দুই জোটের প্রার্থীরা শক্তির মহড়া দিচ্ছে। ভোট যত ঘনিয়ে আসছে, আমাদের মধ্যে ততই আতঙ্কিত হচ্ছেন। অনেকেই সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন। পরিস্থিতি আরও সংঘাতের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনে স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ আসনে প্রশাসন বিশেষভাবে নজর দেওয়ার দাবি জানান তারা।  

যোগাযোগ করা হলে মহাজোটের প্রার্থী অনোয়ার হোসেন খান বলেন, নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত, এলডিপির লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ভোটের মাঠে তাদের কোনো অবস্থান নেই। এতে হতাশ হয়ে বহিরাগত ক্যাডার এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

তবে এসিব অভিযোগ মিথ্যা বলে উল্টো মহাজোট প্রার্থী ও শরিক দলের কর্মী-সমর্থকদের দুষছেন এলডিপির শাহাদাত হোসেন। তার ভাষ্য, এসবের কোনোটাই ঠিক নেই। আমার নেতাকর্মীদের হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এমনকি আমার বাড়িতেও হামলা হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ নেই।  

যোগাযোগ করা হলে রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোতা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এখানে নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। ভোটারদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।  

তবে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে জানান তিনি।  

রামগঞ্জ উপজেলা নিয়েই লক্ষ্মীপুর-১ আসন। এটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বলে জানালেন স্থানীয়রা। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জিয়াউল হক জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মন্ত্রী হয়ে এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। ২০০৮ সালেও বিএনপি প্রার্থী নাজিম উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছেন এ আসনে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন চান তিনি। কিন্তু জোটগত কারণে এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিমকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে।  

এ আসনে একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৯ হাজার ৪৮১ জন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬৯ জন। গত পাঁচ বছরে এখানে ভোটার বেড়েছে ৩৩ হাজার ৮১২ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
এসআর/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।