মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপজেলা পরিষদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন সিইসি।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন ভোটার সারিবদ্ধভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে, আনন্দঘন পরিবেশে, নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য উপস্থিত থাকেন।
নূরুল হুদা বলেন, আপনাদের হাতে কলমে শিখিয়ে দেওয়ার বা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি না। একেবারেই বিশ্বাস করি না, মনে করি না। এ কথা আমি বারবার বলি। কারণ, আপনাদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে সে দায়িত্ব পালন করা হবে কি হবে না সেটা যদি সন্দেহ করি তাহলে আর কোথায় যাবো আমরা? জাতি কোথায় যাবে? একটা কথা আছে না– ইফ নট ইউ, দেন হু? সে পর্যায়ে আপনারা আছেন। আমি আপনাদের চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই— আপনাদের তারুণ্য আছে, উৎসাহ আছে, উদ্যম আছে, আপনাদের মাঝে কাজ করার স্পৃহা আছে। সেটাকে আমি অত্যন্ত মূল্যায়ন করি এবং গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি। সে জায়গায় আপনারা ব্যর্থ হবেন— আমি বিশ্বাস করি না।
সিইসি আরো বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য আছে, সেটা আমাদের রফিক সাহেব নির্বাচন কমিনার বলেছেন। হ্যাঁ আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবারই প্রথম রাজনৈতিক মনোনয়নে হবার কথা। এর আগে কখনো হয়নি। কিন্তু সেসব নির্বাচন কি প্রতিযোগিতামূলক হয়নি? কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। প্রত্যেকেই সেখানে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নেন। প্রত্যেক প্রার্থী, সমর্থক এবং ভোটাররা কিন্তু সে নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখে। আমি মনে করি, আপনারা সেটা করতে পারবেন এবং করবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সোমবার আমাদের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা হয়েছে। সেখানে র্যাবের মহাপরিচালক একটা কথা বলেছেন। আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন— আমাদের যে জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেলো, সেই নির্বাচনের কারণে অথবা নির্বাচনের সময় অথবা এই নির্বাচনকালীন আমাদের যে কার্যক্রম তার মাধ্যমে একটা বড় অর্জন হয়েছে জাতির। তার মতে এবং আমার মতেও আমি এটা বিশ্বাস করি সেটা। সেটা হলো সমন্বয়। সমন্বয়ের কথাটা এ বছরে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে। তিনি একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি বলেছেন যে, সমন্বয়, এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। সমন্বয় কী? তিনি বলেছেন, আমরা এতদিনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা— এরা একেকটা গ্রুপ, একেকটা ক্রশের মধ্যে থাকতাম। আলাদা আলাদা একেকটা অরবিটের মধ্যে থাকার একটা প্রবণতা ছিল। কিন্তু গত নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনে সেই অরবিট থেকে সব বেরিয়ে এসে শামিল হয়েছে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে, সমন্বয়ের মাঠে, সমন্বয়ের অধিক্ষেত্রে।
“একটা জাতির দায়িত্ব পালন করার সকলে মিলে যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। সকলে মিলে, সকলের প্রচেষ্টা, দক্ষতা, সকলের অভিজ্ঞতা একটা ভাণ্ডারে এসে জমা হয়েছে এবং সেখান থেকে আপনারা কাজ করেছেন। এটা একটা বড় অর্জন। সেই অর্জনের ধারাবাহিকতা এখনো আছে এবং থাকবে। নির্বাচন কমিশনই কেবলমাত্র একত্রে সব ধরনের প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে থাকে। আর অন্য কোনো দপ্তর এভাবে সকলের একত্রে কাজ করার সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা মনে করি যে সেই প্রচেষ্ট এবং প্রয়াস সার্থক হয়েছে। ”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, যারা কাজ করেন তাদের প্রতি আমি সবসময় আস্থাশীল। কাজ করতে গিয়ে হয়তো ভুলভ্রান্তি হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে ডিগ্রিধারী একটা লোক এদেশে যারা জীবন শুরু করেছে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে, যাদের মধ্যে অনেকেই বিচারকি দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকেই নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর নির্বাচন পরিচালনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন। তাদের হাতে নির্বাচন কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না।
সিইসি বলেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে। এদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সারাজীবনব্যাপী যেরকম প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে। এবছরও কিন্তু তেমনিভাবে প্রতিযোগিতামূলক হবে। তেমনিভাবে অংশগ্রহণমূলক হবে। তেমনিভাবে এর সেরকম গুরুত্ব বহন করবে। বিগত দিনে অনেক সময় নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে অনেকের জীবন হানি ঘটেছে, অনেকে হয়তো বা আহত হয়েছে এরকম কিন্তু ঘটনা ঘটেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এগুলো সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে যেনো প্রাণহানি না ঘটে। এগুলো আপনারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটবে, মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন। কোনো প্রাণহানি যেন না ঘটে, হতাহত না হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
“একটা জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। একটা জীবন একটা নির্বাচন দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক হয়। এতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এটা দেখতে হবে।
এদেশের মানুষ অন্যান্য মানুষের চেয়ে বেশি নির্বাচনমুখী, বেশি রকমের ভোটমুখী। সেই উৎসব তাদের মধ্যে আছে। সে কারণে তারা ভোট দেন। সুতরাং সেই মালিকের মালিকানা যাতে তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারেন। সেই ব্যাপারে আপনারা অবশ্যই সচেতন করবেন। সে ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন। ”
সিইসি প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে আরো বলেন, আপনারা দূরদূরান্ত থেকে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দিয়েছেন। এজন্য ধন্যবাদ জানাই। এনজয় ইউর লাইফ অ্যান্ড টেক ইউর রেসপন্সিবিলিটি। দ্যাট ইজ ইম্পর্টেন্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯
ইইউডি/এমজেএফ