নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে রোববার (৩১ মার্চ) ভোটগ্রহণ শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ইসি সচিব জানান, ‘অনিয়মের কারণে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
‘অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় সাতজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে তাদের আইনের আওতায় সাজা দেওয়া হবে। ’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৪৯টি উপজেলাতে প্রায় ১২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করেছিলাম। ঢাকা ও স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে তিন শতাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আমরা নিয়োগ করেছিলাম। এছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, এমন কি গ্রাম পুলিশও আমরা নিয়োগ করেছিলাম। ’ ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো হওয়ার কারণে চার ধাপের নির্বাচনে আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, একটি লোকও নিহত হয় নাই। হয়তো কিছু আহত হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা অনেকগুলো উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এমন কি আমরা পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করেছি। কয়েকজনকে আমরা সাময়িক বরখাস্তও করেছি। ’
হেলালুদ্দীন বলেন, ‘আমাদের যেসব কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, সেসব কেন্দ্র তদন্ত করে ইসি ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবে। আর যেসব উপজেলা স্থগিত করা হয়েছে, সেসব উপজেলা নির্বাচন বন্ধের বিষয়েও তদন্ত করা হবে। পরবর্তীতে এর তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আগামী ১৮ জুন ৩০ থেকে ৪০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। ’
চার ধাপের ভোটগ্রহণে ভোটের হার নিয়ে ইসি কতটুকু সন্তুষ্ট-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আহত, নিহত যাতে না হয়, সেটার ওপরে আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। আপনারা আমাদের শতকরা হারের কথা বলেছেন, শতকরা হার বাড়াতে গেলে আমাদের অনিয়মের মধ্যে পড়তে হয়। এ জন্য ভোটাররা যে পরিমাণ আসুন না কেন, আমরা ওটার ওপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা যদি ভোটার হার বাড়াতে চাই, তাহলে আবার সেই স্থানীয় প্রশাসন বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অনিয়মের দিকে ঝুঁকে পড়বে। ’
‘অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। মানুষের যাতে প্রাণহানি না হয়, আহত না হয়, সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রকৃতভাবে কতো লোক ভোটকেন্দ্রে আসে, সেটাই চেয়েছি। ’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাহলে ৮০ শতাংশ ভোট কীভাবে পড়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের তুলনা করলে চলবে না। জাতীয় নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু উপজেলায় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেনি। আমরা চেয়েছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাতে ভোটাররা অংশগ্রহণ করে। ’
রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বার্স্ট ফায়ারের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো নির্বাচনকালীন সংহিসতা নয়। আপনারা কি এটাকে তাই বলবেন? আপনারা জানেন, সেখানে পাহাড়িদের বিভিন্ন গ্রুপ কাজ করে। সেখানে ভোটকেন্দ্র দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আঞ্চলিক দলের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য এমন হতে পারে। এটাকে আমরা নির্বাচনী সহিংসতা বলতে নারাজ। ’
তিনি আরও বলেন, ‘কড়াকড়ি সব সময় ছিল। সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে। তখন সেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, এখনো তাই নেওয়া হয়েছে। বিএনপির সমর্থকরা কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে আসেনি। আমাদের অনুমান ৪০ থেকে ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে, তাও একটা দল যে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের। ’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফলাফল আসতে দেরি হয়। তৃতীয় ধাপে ইভিএমের ফলাফল রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (আরএমএস) আনতে চেয়েছিলাম। ইন্টারনেট ডাউন থাকার কারণে আমরা পারিনি। চতুর্থ ধাপে আমরা সেটা বাদ দিয়েছি। ম্যানুয়ালি ফলাফল আনা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনেও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়েছিল। ’
হেলালুদ্দীন আহমদ আরও বলেন, প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ৪৬৫টি উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে। পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ৪০টির মতো উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। যেসব উপজেলার ভোট আদালত ও ইসি নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোতে তদন্ত সাপেক্ষে ভোটের দিন ঠিক করা হবে।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে সম্পন্ন করছে ইসি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু নিহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন হেলালুদ্দীন।
অথচ দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ফলাফল নিয়ে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের বার্স্ট ফায়ারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সাত জন নিহত হন। আর আহত হন ১৫ জনের মতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৯
ইইউডি/আরআইএস/