এবারও ‘টাকাওয়ালা’ প্রার্থী ভোট করলেও কুলিয়ে উঠতে পারেননি স্থাবর সম্পদহীন এ প্রার্থীর সঙ্গে।
মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে চূড়ান্ত বিজয়ের হাসি হেসেছেন তিনিই।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে এ শীতল সরকারের বিজয়কে ধরা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ‘চমক’ হিসেবে।
আবার লিয়াকত আলী’র কথাই ধরা যাক। ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ময়মনসিংহ পৌরসভার ভোটে তিনবার কাউন্সিলর হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মহানগরের প্রথম ভোটে প্রতিযোগিতাতেই আসতে পারেননি।
ভোটে বিজয়মাল্য পড়েছেন আব্বাস আলী মন্ডল। তার হাতে ধরাশায়ী হয়েছেন করাত প্রতীকের মাহবুবুর রহমান।
লিয়াকতের মতো ‘পতন’ ঘটেছে ময়মনসিংহ পৌরসভার শেষ নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিজয়ী আরো ১০ কাউন্সিলরের।
অনেক ঘটন-অঘটনের এ নির্বাচনে নগরীর ৩৩ টি ওয়ার্ডে ৩১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বিজয়ী হিসেবে ‘আবির্ভূত’ হয়েছেন ২৯ নতুন মুখ।
এর মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬ জন প্রথমবারের মতো ভোটে জিতেছেন। পুরাতন হিসেবে জয়ের ধারা ধরে রেখেছেন সাধারণ ওয়ার্ডের ৯ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের ৪ কাউন্সিলর। পৌরসভার শেষ ভোটেও তারা বিজয়ী হয়েছিলেন।
রোববার (০৫ মে) রাতে নগরীর টাউনহলস্থ এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার মো. আলীমুজ্জামান ফলাফল ঘোষণায় পাওয়া তথ্যে এ বিশ্লেষণী চিত্র উঠে এসেছে।
এর আগে ওইদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ১২৭ টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেন মহানগরীর ভোটাররা।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রাচীন ২১ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১ টি ওয়ার্ডেই নতুন মুখ এসেছে। ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ১২ টি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আরো ১২ নতুন প্রার্থী।
নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ‘রহস্যজনক’ কারণে এবার আর ভোট করেননি বিদায়ী কাউন্সিলর মো: সাঈদ হোসেন। এখানে নতুন মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন ‘ঘুড়ি’ প্রতীকের শরীফুল ইসলাম।
৫ নং ওয়ার্ডে নতুন প্রার্থী নিয়াজ মোর্শেদের কাছে ‘ধরাশায়ী’ হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মীর হাবিবুর রহমান হবি। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: নওশাদ মারা যাওয়ায় ভাগ্যে শিকেয় ছিঁড়েছে তিন যুগের প্রার্থী শীতল সরকারের।
১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হানিফ মো: ওয়ালীউল্লাহ নিজের সরকার দলীয় এক প্রতিমন্ত্রী বন্ধুকে ‘ব্যবহার’ করেও ভোটের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। এখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন ‘মানবতাবাদী’ হিসেবে পরিচিত আনিসুর রহমান আনিস।
১৩ নং ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির একাধিকবারের কাউন্সিলর আব্বাস তালুকদারের ভরাডুবি ঘটেছে। সেখানে নতুন মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন দেলোয়ার হোসেন। ১৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর দুলাল উদ্দিন দুলাল পরাস্ত হয়েছেন। জিতেছেন নতুন মুখ ফজলুল হক।
১৬ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শরাফ উদ্দিনকে ডুবিয়ে নিজের জনপ্রিয়তার প্রমাণ রেখেছেন ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান। ১৭ নং ওয়ার্ডে হেরে বসেছেন বেশ কয়েকবারের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম। সেখানে বিজয় পতাকা উড়িয়েছেন মো: কামাল খান।
১৮ নং ওয়ার্ডেও ঘটনা প্রায় একই রকম। জিতেছেন হাবিবুর রহমান হবি আর হেরেছেন কাউন্সিলর জামাল হোসেন রোজ।
২০ নং ওয়ার্ডে বড় ব্যবধানে হেরেছেন পৌরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর সাইদুর রহমান তারু। তাকে উড়িয়ে বিজয়ী হয়েছেন নতুন মুখ সিরাজুল ইসলাম।
সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে পৌরসভার বিদায়ী ৯ কাউন্সিলর ভোটে ‘পর্যুদস্ত’ হলেও সেই তুলনায় সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে কেবল হেরেছেন বিদায়ী কাউন্সিলর খোদেজা আক্তার (সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর-২) ও ইসমত আরা বানু (সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর-৭)।
দাপটের সঙ্গেই জয়ের ধারা ধরে রেখেছেন পুরাতন হামিদা পারভীন, রোকসানা শিরীন, রোকেয়া হোসেন ও রোকসানা পারভীন কাজল।
তাদের সঙ্গে প্রথম সিটি পরিষদে যুক্ত হচ্ছেন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর-১ থেকে সেলিনা আক্তার, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর-২ থেকে শামীমা আক্তার এবং নতুন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের শাহনাজ বেগম, আইরিন আক্তার, কাউসার ই জান্নাত ও ফারজানা ববি কাকলী।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এসআরএস