সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব স্তরের নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি নির্বাচনেই যন্ত্রটিতে ভোট নিয়ে এর ব্যবহার বিস্তৃত করা হচ্ছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি নির্বাচনের আগেই যেখানে ইভিএম ব্যবহার করা হয়, সে এলাকার ভোটারদের মক ভোটিং বা ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতি শেখানো হয়। কিন্তু এভাবে সব ভোটারকে উৎসাহিত করা যায় না। এজন্য একটি বিরাট সংখ্যক ভোটার জানতে পারেন না, কী করে এই ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করতে হয়। যার প্রভাব পড়ে ভোটের দিন।
মক ভোটিংয়ে যারা অংশ না নেন, ভোট দিতে গিয়ে সেসব ভোটারদের সহায়তা নিতে সংশ্লিষ্ট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার। এতে সময় লেগে যায় বেশি।
ফলে নির্ধারিত সময়ের পরও ভোটারদের লাইন লেগে থাকে কেন্দ্রের বাইরে। ফলে ভোটের ফলাফল প্রকাশ করতেও দেরি হয়। অথচ ইভিএম ব্যবহারের উদ্দেশ্যই হলো বাতিল ভোটের হার কমানো এবং দ্রুততার সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ।
ভোটার এডুকেশন বা ভোটারদের প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতেও ভোটার উপস্থিতি যেমন ছিল না, তেমনি ফল প্রকাশের বিলম্ব হতে দেখা গেছে।
৩১ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটে ভোট পড়ার হার ৮০ শতাংশ হলেও ইভিএমে যে ছয়টি আসনে ভোট নেওয়া হয়েছে, সেখানে ৫৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। একইভাবে স্থানীয় নির্বাচনেও ইভিএমে খুব বেশি সাড়া পড়ছে না।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন মক ভোটের পাশপাশি ভোটারদের ইভিএম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক জ্ঞান দিতে দু’টি পন্থা বাস্তবায়নের কথা ভাবছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে স্কুল শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের ব্যবহার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে স্কুল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকদের এবং প্রার্থীদের মাধ্যমে ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে তারা নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ নিয়ে একটি কর্মশালা আয়োজনের সিদ্ধান্তও হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে ইভিএম পরিচালনায় অন্য একটি সমস্যার কথা জানা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, ইভিএমে ভোটাদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, ভোটাদের আঙ্গুলের ছাপ দেরিতে ম্যাচিং হওয়া। তাই সভায় ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানিং মেশিনের গতি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একই সঙ্গে নতুন ও উন্নতমানের ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বর্তমান কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা এ বিষয়ে বলেন, এই ইভিএম আগেরগুলোর চেয়ে উন্নতমানের। কোনোভাবেই হ্যাক করা সম্ভব নয়। এছাড়া এগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রুততার সঙ্গে ফল প্রকাশ করা যাবে। একই সঙ্গে ভোটের আগের রাতে সিল মারাও বন্ধ হবে।
নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় ইসি। এরপর অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের পর ভবিষ্যতে সব নির্বাচনেই এই ভোটযন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
ইইউডি/এমএ