ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইভিএমের ফাঁকফোকর: ২৫ শতাংশ ভোট কর্মকর্তার হাতে

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৯
ইভিএমের ফাঁকফোকর: ২৫ শতাংশ ভোট কর্মকর্তার হাতে

ঢাকা: উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) বর্তমানে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই মেশিনের মাধ্যমে বাইরে থেকে ডিজিটাল কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। তবে এই যন্ত্র ব্যবহারে রয়েছে কিছু আইনি ফাঁকফোকর।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইভিএমে ভোট দিতে হলে ভোটারের আঙুলের ছাপ অবশ্যই মিলতে হবে। অন্যথায় যন্ত্রটির ব্যালট ইউনিটে ওই ভোটারের জন্য ব্যালট পেপার ওপেন হবে না।

স্মার্টকার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে ভোটারকে শনাক্ত করা হলেও মিলতে হবে আঙুলের ছাপ। তাই কারও আঙুলের ছাপ যদি না মেলে তবে, সেটা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিজেই ওপেন করতে পারেন।

ইভিএম পরিচালনা আইনে বলা হয়েছে- সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে ২৫ শতাংশ ভোটারের জন্য ব্যালট পেপার ওপেন করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আইনে বলা হচ্ছে- কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ যদি না মেলে তাহলে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে, ব্যালট পেপার ওপেন করে দেবেন।
 
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম মেশিন বাইরে থেকে প্রযুক্তিগতভাবে নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এতে সে ধরনের কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি। তবে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ব্যালট পেপার উন্মুক্ত করার বিধানটি খুব সূক্ষ্ম একটি দুর্বলতা।

কেননা, দুষ্কৃতিকারীরা যোগসাজশ করে এই বিধানের অপব্যবহার করার সুযোগ নেবে না তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

তবে ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএমে যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়, সেসব কেন্দ্র কড়া নজরদারির মধ্যে থাকে। কোনো কর্মকর্তা কারও সঙ্গে এ যোগসাজশ করার সুযোগ পাবে না।

ইসির যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার বিধানটি নির্বাচনকে শতভাগ সুষ্ঠু করার জন্য রাখা হয়েছে। এখন যারা শ্রমিক, বয়স্ক কিংবা যারা হাতের রেখা ক্ষয় হয়ে যাওয়ার মতো কাজে যুক্ত থাকেন, তাদের আঙুলের ছাপ ম্যাচ করে না। এটি একটি বিরাট টেকনিক্যাল সমস্যা। আবার আঙুলের ছাপ ছাড়া ভোটারকে চিহ্নিত করার মোক্ষম কোনো উপায়ও নেই। তাই এ সমস্যা এড়াতে আইনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে কারও আঙুলের ছাপ না মিললে, তার আঙুলের ছাপ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। আর কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অসদুপায় অবলম্বন করলে তার জন্য কঠোর শাস্তিও রয়েছে।

আরও পড়ুন>>> ইভিএমের কেন্দ্রে ‘কারচুপি’র অভিযোগ

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আইনে কোনো ফাঁকফোকর নেই। দায়িত্ব তো কারও কাছে থাকবেই। এখন কেউ যদি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন, তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।

২০১০ সালে দেশে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের প্রচলন শুরু করে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন। সে সময় তারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে ১২শ ইভিএম তৈরি করে নেয়। ওই কমিশন এই যন্ত্রে ভোট নিয়ে সফলও হয়।

পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ২০১৫ সালে ভোট নিতে গেলে একটি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সে মেশিনটি পরে আর ঠিক করতে পারেনি কমিশন। এমনকী বিকল হওয়ার কারণও উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ওই মেশিনগুলো নষ্ট করে নতুন করে আরও উন্নত প্রযুক্তি ইভিএম তৈরির করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

কেএম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় ২ লাখ ২০ হাজার করে ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে। এজন্য হাতে নেওয়া হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।

রংপুর সিটি করপোরেশনসহ বেশ কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই যন্ত্রে ভোটগ্রহণ করে ইসি। সংসদ নির্বাচনে এই যন্ত্রে ভোট পড়ার হার ছিল ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ। যেখানে ব্যালট পেপারে ভোট পড়ার হার ছিল ৮০শতাংশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
ইইউডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।