ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

২০২২ সালের ৭ জুলাই ইসির ৫০ বছরপূর্তি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
২০২২ সালের ৭ জুলাই ইসির ৫০ বছরপূর্তি

ঢাকা: স্বাধীনতার পর গঠিত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ৫০ বছরপূর্তি হচ্ছে ২০২২ সালের ৭ জুলাই। আর এই সুবর্ণজয়ন্তী উপযাপন এত বছর আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।



ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৫৬ সালে ঢাকায় একটি শাখাসহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। ৫৬-৭১ সাল পর্যন্ত চারটি কমিশন দায়িত্ব পায়। সে সময় ঢাকায় পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের অফিস ছিল মালিবাগে, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গত কারণেই সত্তরের নির্বাচনের সব কাগজ-পত্রও পুড়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭২ সালে শেরে বাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে প্রথমে ভাড়া ভবন, তারপর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন ‘নির্বাচন ভবন’ পায় ইসি। আগের নামও পরিবর্তন হয়ে হয়, ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’।
ইসির যুগ্ম-সচিব ও জনসংযোগ (পরিচালক) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিচারপতি মো. ইদ্রিস। সে হিসাবে ২০২২ সালের ৭ জুলাই কমিশনের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। তবে, সে সময় ঈদুল আযহার জন্য ৫০ বছরপূর্তি উদযাপনে তারিখটা পরবর্তীতে ঠিক করা হবে।

বর্তমানে দায়িত্বরত কমিশন এই উদযাপন আয়োজন করতে পারবেন না। কেননা, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাবে। নতুন কমিশনের হাতেই হবে ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন।

তবে, বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন ৫০ বছরপূর্তির অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি এজন্য গঠিত কোর-কমিটির সভায় বেশকিছু বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠান তিন দিনব্যাপী করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

এতে প্রথম দিন সকালে র‌্যালি, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের আমন্ত্রণ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান, প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি। এতে সব স্টেকহোল্ডার, দূতাবাসসহ অন্যান্যদের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।

এছাড়া ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসির ৫০ বছরের ইতিহাস নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরিসরে নির্বাচন নিয়ে কাজ করে এবং ইসি আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থার সদস্য তাদেরকে আমন্ত্রণ, নির্বাচন ভবন প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপি মেলার আয়োজন এবং শেষ দিন কনসার্ট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নেরর জন্য ১১টি উপ-কমিটি গঠন করার কথা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এই উপ-কমিটির আহ্বায়করা নিজ নিজ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কমিটির পরিকল্পনা কোর-কমিটির কাছে উপস্থাপন করে পরে বাস্তবায়ন করবে।

পেছনে দিকে তাকালে যা দেখা যায়:

নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বর্তমান পর্যন্ত ১২ কমিশন দায়িত্ব পেয়েছে। যারা ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১১টি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ৫টি পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচন উপহার দিয়েছে।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। সিইসি ছিলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯ সালোর ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। দলটি জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে। দায়িত্ব পালন করেন সিইসি নুরুল ইসলাম।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়  ১৯৮৬ সালের ৭ মে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। বিএনপি এই নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। সরকার গঠন করে জাতীয় পার্টি। সিইসি ছিলেন এটিএম মাসউদ।

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। নির্বাচনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করেছিল। এতে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। দায়িত্বে ছিলেন সিইসি এটিএম মাসউদ।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয় লাভ করে। তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪২টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। সিইসি ছিলেন মো. আব্দুর রউফ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। সে সময় নিদর্ললী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। বিএনপি ওই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ৩০০টি আসনই লাভ করে সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট সংসদ ছিল এটি। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ক’দিন পর আবার নির্বাচন হয়। সিইসি ছিলেন একেএম সাদেক।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০টি আসনের মধ্যে  আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। সিইসি ছিলেন মোহাম্মদ আবু হেনা।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। এ সময় সিইসি ছিলেন আবু সাঈদ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২৩০টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন এ সময় দায়িত্ব পালন করেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। দেশের নির্বাচনী ইতিহাসের নজির বিহীন রেকর্ড স্থাপন করে এই ভোটে আওয়ামী লীগের ১৫৪ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করলে ২৩৪ আসন নিয়ে সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে সময় দলীয় সরকারের অধীনে প্রথম ভোট হয়। এ সময় দায়িত্ব পালন করেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও আসন পায় ছয়টি। ২৫৭ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ সময় দায়িত্ব পালন করে কেএম নূরুল হুদা কমিশন। এ পর্যন্ত ১২ জন সিইসির সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে কাজ করেছেন ২৭ জন নির্বাচন কমিশনার।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২১
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।