ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কুসিক ভোট: প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২২
কুসিক ভোট: প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা

ঢাকা: আসন্ন কুমিল্লা সিটি করোপরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করেছে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন।



প্রার্থীর যোগ্যতা:

এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে অব্যশই ২৫ বছরের বাংলাদেশি হতে হবে। মেয়র পদের জন্য পুরো সিটির কোনো একটি এলাকার ভোটার হতে হবে। আর কাউন্সিলর পদের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটর হতে হবে প্রার্থীকে।

প্রার্থীর অযোগ্যতা: 

নির্বাচনে প্রার্থীর অযোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করলে বা হারালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। এছাড়া কোনো আদালত থেকে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে, প্রজাতন্ত্র বা সিটি কর্পোরেশন বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকলেও প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন। এছাড়া আরও বেশ কিছু অযোগ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে ইসি।

ক) সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনে সরকারকে পণ্য সরবরাহ করার জন্য বা কোন চুক্তি বাসত্মবায়ন বা সেবা কার্যক্রমের জন্য বা হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসাবে কোনো অংশ বা স্বার্থ আছে এরূপ কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ থাকলে (এ বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে মূল আইন দেখে নিতে হবে),
খ) প্রার্থীর পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত থাকলে বা এর জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব থাকলে বা সিটি কর্পোরেশনের কোন বিষয়ে কোন ধরনের আর্থিক স্বার্থ থাকলে,
গ) বসবাসের নিমিত্ত গৃহ-নির্মাণের জন্য কোনো ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণ ব্যতীত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণ বা তার কোনো কিস্তি পরিশোধে খেলাপি হলে,
ঘ) কোনো কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার যার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণ বা কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখের পূর্ববর্তী এক বৎসরের মধ্যে পরিশোধে খেলাপি হলে,
ঙ) মনোনয়নপত্র জমাদানের দিনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী থাকলে,
চ) সিটি কর্পোরেশনের কাছ হতে গৃহীত কোনো ঋণ বা দায় দেনা অপরিশোধিত থাকলে,
ছ) সিটি কর্পোরেশন বা সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনকে নির্ধারিত দায়কৃত অর্থ অপরিশোধিত থাকলে,
জ) জাতীয় সংসদ বা কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য হলে,
ঞ) সিটি কর্পোরেশনে তহবিল তসরুফের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত, জাতীয় বা আমত্মর্জাতিক আদালত/ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হলে এবং কোন আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি ঘোষিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।

এছাড়াও সরকারি কর্মচারীর প্রতি ক্ষতি সাধনের হুমকি প্রদান (দণ্ডবিধি ধারা ১৮৯), মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি করা (দণ্ডবিধি ধারা ১৯২), কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি হতে বাঁচানোর জন্য উপহার গ্রহণ করা (দণ্ডবিধি ধারা ২১৩), সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্তব্য কর্মে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাপূর্বক আঘাত করা (দণ্ডবিধি ধারা ৩৩২), সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্তব্য কর্মে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাপূর্বক গুরুতর আঘাত করা (দণ্ডবিধি ধারা ৩৩৩), সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্তব্য সম্পাদন বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আক্রমণ কিংবা অপরাধজনক বল প্রয়োগ (দণ্ডবিধি ধারা ৩৫৩) করা, এই অপরাধগুলোর যে কোনো একটির কারণে আদালত থেকে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হলেও কোনো ব্যক্তি সিটি নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেন না।

এদিকে আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়ে দায় থেকে অব্যাহতি পেলে, কোনো ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং কেবল মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত হলে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন।

বিদেশি অনুদান বা তহবিল গ্রহণকারী বেসরকারী সংস্থার প্রধান কার্যনির্বাহী পদ হতে পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ বা পদচ্যুত হলে এবং এরপর তিন বৎসর অতিবাহিত হলেও প্রার্থী হওয়া যাবে। আবার সরকারি বা আধা সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোনো সমবায় সমিতি, ইত্যাদি হতে নৈতিক স্খলন, দুর্নীতি, অসদাচরণ ইত্যাদি অপরাধের জন্য শাস্তিমূলকভাবে চাকুরিচ্যুত হলে এবং এরপর পাঁচ বছর কাল অতিক্রান্ত হলেও প্রার্থী হওয়া যাবে।

মনোনয়ন ফরম সংক্রান্ত কিছু তথ্যাবলী:

সিটি কর্পোরেশনের অন্য কোনো পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে মনোনয়ন ফরম বাতিল হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ঘোষণায় অবশ্যই প্রার্থীর সই থাকতে হবে, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় (সংযুক্ত নমুনা অনুযায়ী) সই করতে হবে। এটি এফিডেভিটরুপে যথাযথভাবে পূরণ করে নোটারি পাবলিক অথবা ম্যাজিস্ট্রেটের সই নিয়ে দাখিল করা আবশ্যক। মনোনয়নপত্র ও হলফনামার সঙ্গে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের সম্ভাব্য উৎসের ও সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণী সম্বলিত নির্ধারিত ফরম-ঢ দাখিল করতে হবে।

যেসব কাগজপত্র বা দলিলালি সংযুক্ত করতে হবে:

যথাযথভাবে পূরণকৃত মনোনয়ন ফরম (ফরম নম্বর-ক/ক-১/ক-২), অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি, বর্তমানে কোন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কিনা তার বিবরণ, অতীতে আপনার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কিনা, থাকলে এর রায় কী ছিল তার বিবরণ, ব্যবসা বা পেশার বিবরণী (এটি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে)।

আয়ের উৎস বা উৎসমূহের বিবরণ, প্রার্থীর নিজের ও অন্যান্য নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে একক বা যৌথভাবে বা প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল সদস্য কর্তৃক গৃহীত ঋণের পরিমাণ অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওইসব প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ, জামানত বাবদ নির্ধারিত অর্থ জমাদানের চালান/ব্যাংক ড্রাফটের কপি, নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ করার জন্য অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস ও সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণীও দিতে হবে।

এছাড়া নিজের ও নির্ভরশীলদের সম্পদের বিবরণী, ঋণ সংক্রান্ত তথ্যাদি, আয়কর রিটার্নের কপি ও আইটি- ১০ই (সম্পদের বিবরণী), আয়কর পরিশোধের প্রমাণপত্র (আয়কর বিভাগ প্রদত্ত রসিদ) ও ১২ ডিজিটের টিআইএন  সনদের কপিও বাধ্যতামূলকভাবেই জমা দিতে হবে।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৭ মে ও মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ২০-২২ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২৩-২৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২২
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।