ঢাকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বা তিন-চতুর্থাংশ ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রসহ পুরো নির্বাচনী এলাকায় থাকছে অতিরিক্ত ফোর্স।
মঙ্গলবার (২৩ মে) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান।
আলমগীর বলেন, আমাদের কাছে সবগুলো কেন্দ্রই (৪৮০টি) গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রগুলো দুটি ভাগে ভাগ করেছে ইসি। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর ঝুঁকি নেই এমন কেন্দ্রগুলোকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বা তিন-চতুর্থাংশ কেন্দ্রেই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, শিল্প এলাকা বিধায় গাজীপুর সিটিতে বিভিন্ন ধরণের মানুষের বসবাস। তাই অপরাধ প্রবণতাও বেশি। তবে নির্বাচনী পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো।
কোনো থ্রেট না থাকলেও যেহেতু শিল্প এলাকা, তাই দুষ্কৃতিকারীরা বা অসৎ উদ্দেশ্য যাদের থাকে তারা যেন অন্যায় পরিস্থিতি করতে না পারে তাই অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৭৪ জন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। সেখানে র্যাবের ৩০টি টিম থাকবে। বিজিবির প্রায় ১৩টি প্লাটুন থাকবে। আরও ২০ জন বেশি থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম থাকবে ৫৭টি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স থাকবে। অর্থাৎ প্রচুর আইন রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েন থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে তারা দলের বা যে-ই হোক না কেন তাকে সাথে সাথে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। অনিয়মের মাত্রার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে, তা নির্ভর করবে। ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, অনিয়মের মাত্রার ওপর শাস্তি নির্ভর করবে।
গাজীপুর সিটি ভোটে মেয়র পদে আট জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন- মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, নৌকা প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহমেদ। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে গাসিকের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটার তাদের ভোটধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ ও পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী এবং ১৮ জন রয়েছে হিজড়া ভোটার।
প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিশাল স্ক্রিনে ভোটের পরিস্থিতি দেখবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এ নিয়ে বলেছেন, সিসিটিভি ক্যামেরায় কোনো অনিয়ম দেখতে পেলে গাইবান্ধা নির্বাচনে চেয়েও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৮ সালের ২৬ জুন। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময়গণনা শুরু হয়েছে গত ১১ মার্চ। বর্তমানে যারা নির্বাচিত রয়েছেন তাদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৩
ইইউডি/এমজে