ফরিদপুর: ফরিদপুরের ৫টি পৌরসভার মধ্যে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বোয়ালমারী ও নগরকান্দা এই দুটি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এছাড়া ফরিদপুর বিভাগ ও ফরিদপুর পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন হওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন থাকায় এই পৌরসভার নির্বাচন প্রথম দফায় হচ্ছে না বলে একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সরেজমিনে বোয়ালমারী ও নগরকান্দা পৌরসভা ঘুরে বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থী ও সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই দুই পৌরসভায় সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে অনেকটা সংশয়ে রয়েছেন তারা।
নগরকান্দা উপজেলা যুবদলের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আলীমুজ্জামান সেলু বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতেই একের পর এক মামলা হামলায় জর্জরিত আমিসহ দলের নেতাকর্মীরা। তার ওপর নির্বাচনে মাঠে নামায় নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তবুও ভোটের মাঠে থেকে লড়াই করে যাবো।
তিনি বলেন, অন্য কোথায় কি হবে জানি না তবে নগরকান্দা পৌর নির্বাচন হবে নামমাত্র। কারণ গত ৩/৪ মাস আগে এই পৌরসভায় মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষ ভোট দিতে বা কেন্দ্রের আশে পাশেই যেতে পারেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌর নির্বাচনে ভোটের লাইনে যারা ছিলেন তারা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। সেলু অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারও সেই পরিকল্পনাই করছে আওয়ামী লীগ।
নগরকান্দা পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ফখরুজ্জামান ফকো একই রকম অভিযোগ করে বলেন, তিন মাস আগের উপ-নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতাকর্মী সমর্থক ঘর থেকেই বের হতে পারেনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তো আগে ভাগেই দলীয় শত শত নেতাকর্মীকে অন্যায় ভাবে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ফকো বলেন, নগরকান্দা পৌরসভায় নির্বাচনে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরই জয় হবে। কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন আলামত দেখছি না।
বিএনপি নেতা ও বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আব্দুর শুকুর শেখ বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের এখনো বাকি এক মাসেরও বেশি। পুরোপুরি আনুষ্ঠানিকতাও শুরু হয়নি এখনো। এরই মধ্যে ভোট কেটে জিতে যাওয়ার মাস্টার প্লান করে বসে আছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। নির্বাচনে না জিতেই মেয়রের চেয়ারে বসার স্বপ্ন দেখছে তারা।
তিনি বলেন, দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন প্রহসন ছাড়া কিছু না। ক্ষমতার রিনিউ করতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, র্যাব ও পুলিশ দিয়ে সুষ্ঠ নির্বাচন হবে না। এই নির্বাচনে যদি সেনা মোতায়েন করা হয় সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। অন্যথায় সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব হবে না।
শুকুর বলেন, বোয়ালমারী পৌরসভায় গত ১৪ বছর মেয়র আমি। তাই এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি অনেক। সাধারণ মানুষ তাই আমার পাশে রয়েছে। বোয়ালমারী পৌর নির্বাচনে ভোট কাটার কোন চেষ্টা করলে ভোটাররা কাউকে ছেড়ে দেবে না।
নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না । নিজেরা ক্ষমতায় থেকে বার বার কারচুপি আর ভোট ডাকাতি করেছে বলে আওয়ামী লীগকেও তাই মনে করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভোট কাটতে হয় না। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদাহরন দিয়ে বেলায়েত বলেন ভোট কাটার ইচ্ছে থাকলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জিততে পারতো না।
বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা পিকুল বলেন, নির্বাচনের নাম শুনলেই বিএনপির ভয় করে। সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন তো তারা কোনদিনও করেনি।
তিনি বলেন, ভোট আওয়ামী লীগ না বিএনপি নেতারা কাটার সুযোগ না পেয়ে উল্টাপাল্টা বলছে।
তবে ফরিদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফরিদপুরের প্রত্যেকটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনও নিরপেক্ষ হবে এই নিয়ে কোন দলের প্রার্থীর সংশয়ের কিছু নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
আরআই/