ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

মদন থেকে মাহবুব আলম

‘খালি কী ভুট দিলেই অইবো, প্রার্থীরারেও দেহন লাগবো’

মাহবুব আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
‘খালি কী ভুট দিলেই অইবো, প্রার্থীরারেও দেহন লাগবো’ ছবি: শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মদন (নেত্রকানো) পৌর এলাকা ঘুরে: ‌‘হারা বছর তো দেহিই, এইবার ভুট দেওনের আগে প্রার্থীরারেও দেহন লাগবো। তারা আমরার ভুট নিয়া কী করে না করে।

খালি কী ভুট দিলেই অইবো’।
 
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বেশ কড়া সুরে একনাগাড়ে বলে যাচ্ছিলেন নেত্রকোনার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভাটি এলাকা মদন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনির উদ্দিন।
 
শুধু মনির উদ্দিনই নয়, একথার সঙ্গে মাথা নেড়ে একমত প্রকাশ করেন চায়ের দোকানের পাশের বেঞ্চে বসা আবদুল জব্বারও।
 
আবদুল জব্বার স্থানীয় স্কুলের গণিতের শিক্ষক ছিলেন। সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। সদা হাস্যময়ী এ শিক্ষক বললেন, ‘আমরা আর কিছু চাই না। কর দিয়ে সময় মতো সুপেয় পানি, নিরাপত্তা জোরদার আর শান্তিমতো এলাকায় বাস করতে চাই। আর কিছু চাই না’।

মদন পৌরসভার জাহাঙ্গীরপুর সেন্টার পয়েন্ট চৌরাস্তা মোড়ের আটপাড়া রোডের পশ্চিম পাশে পুরনো পৌরভবনের সামনে চায়ের দোকানে বসে নির্বাচনী আড্ডা দিচ্ছিলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম ও শামীমুর রহমান।
 
নির্বাচনের কী অবস্থা? এমন প্রশ্নের উত্তরে মৃদু হেসে হাতে একটা চেয়ার দেখিয়ে বসার ইশারা করে মহিউদ্দিন বলতে থাকেন, ‘‌ভুট মানেই চায়ের আড্ডা’।
 
‌’কিন্তু এইবার যেন এইডা জমতাইছেই না। তবে প্রার্থী আর তারার সমর্থকরা তো নিজ নিজ পক্ষে প্রচার করতাছেই। আমার চায়ের দুকানে অন্যবারের মতো আড্ডা কম’।
 
‌’গ’ শ্রেণীর এ পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন ১২ হাজারের কিছু বেশি। আর আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৮ জন।
 
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো মদনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে মদনে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন মোট ৫ জন প্রার্থী।

তারা হলেন- নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির স্থানীয় নেতা একেএম সাইফুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী মাশরিকুর রহমান বাচ্চু, নারকেল গাছ প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হান্নান তালুকদার শামীম, জগ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক এবং লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ফিরোজ খান।  
 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীম স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রেবেকা মোমিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
 
আর বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হান্নান তালুকদার শামীমকে আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমদের অনুসারী বলে জানেন স্থানীয়রা।
 
বিভিন্ন সময় দলীয় সংকটে শামীমের অবদান থাকলেও নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে এলাকার মানুষের কাছে তার বেশ জনপ্রিয়তা দেখা গেছে।   
 
ক্ষমতাসীন দলের এমপির ‌‘আস্থাভাজন’ হওয়ায় দলের টিকিট পান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম।
 
৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মদন বাজারের ব্যবসায়ী তাবারুল ইসলাম হিরু বলেন, দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর নামও ভোটারদের মুখে মুখে আছে।

‌‘এখন নির্বাচনে কে পাস করেন সেটা তো ভোটের পর বলা যাবে। তবে যেই মেয়র হোন না কেন প্রার্থীদের কাছে আমরা পৌর শহরের সব সুবিধা প্রত্যাশা করি’।
 
ভোটের হিসেব-নিকেশ নিয়ে অনেকটা বিশেষজ্ঞের মতো মতামত দিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা।   
 
ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বাংলা পড়ান, কিন্তু ভোটের হিসেব করলেন ঠিক গণিতজ্ঞের মতো।
 
তিনি বলেন, মদন পৌরসভাটি মগড়া নদীর এপারে-ওপারে। অর্থাৎ এটি সাবেক জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের অর্ধেক আর আগের মদন ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত।

‌‘নদীর পূর্বে তিনটি ওয়ার্ডে (৩, ৪ ও ৫) মোট ভোটার রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। আর পশ্চিমে অর্থাৎ ১, ২, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার আছেন সাত হাজারের বেশি। এর মধ্যে যতো মেয়র প্রার্থী আছেন সবাই পশ্চিম পাড়ের, পূর্বের কোনো মেয়র প্রার্থী নাই। তারা যাকে সাপোর্ট করবেন মেয়র হবেন তিনিই’।
 
তার সঙ্গে সুর মেলালেন মদন-খালিয়াজুরি প্রবীণ সমিতির সভাপতি দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন।

তার মতে, ‘সার্বিকভাবে বলতে গেলে বিএনপির অবস্থান ভালো নেই। তাই নৌকার প্রতিই মানুষের ঝোঁক বেশি। এর মধ্যে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়েও অনেকে কথাবার্তা বলছেন। তবে কারও মুখে লাঙলের কথা নাই, প্রার্থীকেও দেখিনি এলাকায়’।
 
২০০০ সালের আগস্টে যাত্রা করা মদন পৌর এলাকার আয়তন ১০ দশমিক ১১ বর্গ কিলোমিটার। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ৪৭৬ জন লোকের বাস।

এলাকার নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে এনজিও কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, মোহন তালুকদার, ওয়াহিদুল হক জানালেন, হাওরাঞ্চলে অবস্থানের কারণে এ এলাকায় আর্সেনিকের ঝুঁকি বেশি। এরপরও নলকূপই সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থা নেই। পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাও খুবই নাজুক।

এসব সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
 
তবে শুধু ফিরিস্তিতে অনুরোধের ঢেঁকি না গিলে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিজের এলাকার যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে চান শফিকুল, মোহন ও ওয়াহিদুলরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এমএ/এএসআর

** মগড়ার এপার-ওপার দ্বন্দ্বে ‌‘বঞ্চিত’ পৌরবাসী
** ‘নির্বাচনে চা বেচা তো বাড়ছে না’
** ভেদাভেদ ভুলে সমান তালে নৌকা-ধানের শীষ
** ত্রিমুখী লড়াইয়ে সরগরম ভোটের মাঠ
** আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’
** ‘হারা বছর হবর নাই, এবার বুইজ্জা হুইন্না ভুট দিয়াম’
**  ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।