ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

জামালপুর থেকে এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

নির্বাচনী চা!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
নির্বাচনী চা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জামালপুর পৌরসভা থেকে: ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত সবে মাত্র কামড় বসিয়েছে। লুঙ্গি আর শার্টের সঙ্গে গামছা দিয়ে মাথা পেঁচিয়েছেন খোরশেদ।

প্ল্যাস্টিকের চেয়ারে বসে ইট দিয়ে বানানো অস্থায়ী চুলায় আগুন ধরিয়েছেন। মাঝারি আকারের একটি পাতিলে ফুটছে গরম পানি।

অন্যরা শীতের দাপট থেকে রক্ষা পেতে সাধ্যমতো শীতবস্ত্র পরে লাকড়ি নাড়ছেন। আগুনের তাপে শরীর গরম করার পাশাপাশি খোরশেদকে সঙ্গ দিচ্ছেন নির্বাচনী চা বানাতে। পাশের নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে কাপ আসছে। সেই চায়ের কাপে চুম‍ুক দেবেন ত্রিশ থেকে ষাটোর্ধ্ব ভোটাররা।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছনকান্দা ছয় রাস্তা মোড় এলাকায় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী কামরুল হাসান মিল্টনের (গাজর) নির্বাচনী ক্যাম্পে দেখা গেলো এমন দৃশ্যের।

ক্যাম্পে নতুন কেউ আসতেই খোরশেদ, কামাল, রকিবুলসহ কয়েকজন সমস্বরে বলছেন, নির্বাচনী চা খাইয়া যাইন (যান)। নিজেগর (নিজেদের) বানাইন্ন্যা (বানানো) চা।

এ ক্যাম্পের আশেপাশে ছোট-বড় কয়েকটি চায়ের দোকান। কিন্তু নিজেরাই আদা চা বানাচ্ছেন কেন, জানতে চাইলে মুচকি হেসে খোরশেদ বলেন, প্রতিদিন ছয় নাইন্দা (পাতিল) চা বানাই। চায়ের দোকান থেইক্যা চা আইন্না (এনে) পোষান যাইতো না। প্রার্থীর লেইগ্যা টেহা ছাড়া কাম করতাছি। নিজেও খাই, ভোটারগরেও খাওয়াই।

খোরশেদের সঙ্গে আলাপের সময়ই চা পানের অনুরোধ এলো ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মিল্টনের। তিনিও খোরশেদদের মতো বললেন, নির্বাচনী চা খাইয়া যাইন।

পাশেই দাঁড়ানো কোরবান আলীসহ কয়েকজন। মেয়র প্রার্থীরা চা-পান খাওয়ায় কিনা, প্রশ্ন করতেই গজ গজ করে অটোরিকশা চালক কোরবান বলেন, মেয়র প্রার্থীরা এই ওয়ার্ডে কম আইতাছে। অহন পর্যন্ত একদিন এলাকায় আইছে। তাগর (তাদের) চা খাওনতু (খাবো) আরও পরে।

ভোটের মাঠ গরম কেমন, বলতেই মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে আরেক অটোরিকশা চালক কামালের সোজাসাপ্টা জবাব, আমরা তো গতর খাটাইয়্যা খাই। কর্মজীবী মানুষ। ইলেকশন লইয়্যা চিন্তা কম।

কামালের কথায় সমর্থন দিয়ে বিকাশের চাকুরে ইমতিয়াজ বলেন, সন্ধ্যার পর ভোটের খবর নেই। কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী চা খাওয়ায়। মেয়র প্রার্থীরা খোঁজ লয় (নেয়) না।

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি ও বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুনের মধ্যে আসল লড়াই চলছে।

কেমন প্রার্থী পছন্দ প্রশ্নে ইসলাম নামে এক শ্রমিকের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের মেয়র না হইলে তো উন্নয়ন হইতো না। ভোট দিবার সময় উন্নয়নের কথা তো আগে ভাবতে হইবো।

পাশের একটি চা স্টলে চা পান শেষে এ আলাপে যোগ দিয়েই একজন বললেন, নির্বাচনের সাত দিন আগে মেয়রগর (মেয়রদের) চা খাওন যাইবো। অহন কাউন্সিলররা খাওয়াইতাছে। আশপাশের দোহান থেইক্যা নিজের টেহাতেও চা খাইতাছি।

দুই প্রার্থী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্থানীয় নজিবুল ইসলাম বলেন, দুই প্রার্থীই তো ভালো। তবে বিপদে-আপদে মামুন ভাইরে আমরা পাই। তারে ফিরাই দিওন যাইতো না।

প্রাচীন ও প্রথম শ্রেণির জামালপুর পৌরসভার ৪২টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৯৬ হাজার ৩শ ৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৬ হাজার ৯শ ১৩ জন। নারী ভোটার ৪৯ হাজার ৪শ ৪৪ জন। এখানে মেয়র পদে লড়ছেন তিন প্রার্থী।

তারা হলেন- মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি (নৌকা), শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন (ধানের শীষ) ও হাফিজুর রহমান বাদশা (লাঙ্গল)।

সাবেক ও বর্তমান মেয়র মনি এবং মামুনের মধ্যকার হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধ নিয়ে ভোটারদের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই। তাদের প্রচারণায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এসএস

** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।