ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

মেলান্দহ থেকে এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

পৌরসভা শুধু নামেই!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
পৌরসভা শুধু নামেই! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জামালপুরের মেলান্দহ থেকে: ১৭ বছর আগে পৌরসভায় উন্নীত হলেও প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত মেলান্দহ পৌরসভার বাসিন্দারা। বছরের পর বছর কেটে গেলেও এখানে বাড়েনি সেবার মান।

কিন্তু তাদের ঘাড়ে ঠিকই বেড়েছে করের বোঝা। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে ইসলামপুর পৌরসভা থেকে মেলান্দহ পৌরসভায় প্রবেশের পথেই এমন অভিযোগ শোনা গেলো আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শফিক জাহেদী রবিনের কর্মী-সমর্থকদের মুখে।

তারা বলেন, পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। রাস্তাঘাট ভাঙা। বর্ষা মৌসুমে হাঁটু পানি থাকে। এসব কারণে বিএনপির মেয়র শতভাগ ব্যর্থ।

তাদের সঙ্গে কথা বলে পৌর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতার চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। ৫ নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মেলান্দহ স্টেশন রোড এলাকার রূপায়ন জুয়েলার্সের মালিক জীবন চন্দ্র রায় আক্ষেপ করে বলেন, ‘এটা তো নামেই পৌরসভা। একেবারেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাই’।

বর্ষাকালে মাহমুদপুর, থানা রোড, গুরু হাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেয়। মেলান্দহ বাজার এলাকারও নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। নাগরিক সেবার এমন হালে ভোটাররা সন্তুষ্ট নন।

তার দোকানেই অনেকক্ষণ ধরে আড্ডা দেওয়া স্থানীয় এক শিক্ষক আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘বর্ষায় থানার সামনে দিয়া পাবলিক ন্যাংটি না মাইরা যাইতে পারেন না। ’

১২.৯৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মেলান্দহ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। শুরুর দিকের ‘গ’ শ্রেণির এ পৌরসভা এখন ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। এখানে মোট ভোটার ২১ হাজার ৭ জন। পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৩৭৫, নারী ভোটার ১০ হাজার ৬৩২ জন।

স্থানীয় বাসিন্দা জীবন চন্দ্র বলেন, এ বছর পৌরকর বেড়েছে তিনগুণ। ৩শ’ টাকার কর হয়েছে ৯শ’ টাকা।

৯ নং ওয়ার্ডের পাচুয়াপাড়া এলাকার ফেরদৌস নামের এক কলা বিক্রেতা বললেন, ‘কোনো পাবলিক টয়লেট নেই। ’ তার দোকানে কলা কিনতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আব্দুল হামিদের কড়া স্বরে অভিযোগ, ‘পৌরসভা হলেও এখানে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই লাগেনি শহরে। এরচেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা থাকাটাই ভালো ছিল। ’

স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী পায়েলও অভিন্ন সুরে বলেন, ‘মেলান্দহ বাজারে এখনো কোনো ড্রেন নাই। এটাই বড় সমস্যা। বৃষ্টি হইলেই এখানে হাঁটু পানি জমে থাকে। যিনি এবার মেয়র হবেন, তার কাছে আমাদের প্রধান দাবি থাকবে পরিকল্পিত উপায়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার’, যোগ করেন এ শিক্ষার্থী।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ও স্থানীয় মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের নিজের নির্বাচনী এলাকার এ পৌরসভা নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিক জাহেদি রবিন ও বিএনপি’র প্রার্থী হাজি দিদার পাশা। এর মধ্যে দিদার পাশা বর্তমান মেয়র।

পৌরবাসীর ধারণা, এবারের নির্বাচনে নৌকা আর ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে কঠিন ভোটযুদ্ধ হবে। তবে ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামীণ পরিমণ্ডলের এ পৌরসভার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন নোংরা শহরের তকমা মোছাসহ স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যু।

এসব সমস্যার পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া দেখা গেলো স্থানীয় ভোটারদের মাঝেও। স্থানীয় জিন্নাহ মার্কেটে আলমের চায়ের দোকানে রবিন ও সুজন মিয়াসহ কয়েকজন চায়ের কাপে ভোটের আলাপের ঝড় তুলছিলেন। তাদের সঙ্গে আলাপের সময়েই দূরে বসে থাকা আব্দুল আলিম নামের একজন ছুটে এলেন। তিনি বললেন, ‘আমরা পরিবর্তন চাই। নতুন মুখের প্রত্যাশা করি। ’

কেমন মেয়র প্রার্থীকে ভোট দেবেন, আড্ডায় যোগ দেওয়া তরুণ ভোটার ইমামুল সজিব ও রেজোয়ান জাবেদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ভোট নিয়ে সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় আছি। নানা অজুহাতে বিএনপি’র বর্তমান মেয়র উন্নয়ন করেনি। তাই এবার আওয়ামী লীগেরও চান্স আছে। ’

পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত নানা সমস্যা নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিক জাহেদী রবিন মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, এ পৌরসভায় গত ১২ বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। পৌর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কমেছে সড়কবাতির সংখ্যা। ৭০ ভাগ এলাকাতেই সড়কবাতি নেই।

বর্তমান পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, রাজস্ব খাতে কোনো টেন্ডার না করে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে পৌর মেয়র ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। বছর খানেক আগে মন্ত্রী মহোদয় (মির্জা আজম) জাইকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন প্রকল্প এনে দিয়েছিলেন। এর ফলে পৌরসভায় কিছু রাস্তাঘাটের কাজ হয়েছে।

নিজে মেয়র নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা দূর করতে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের ঘোষণা দিয়ে বলেন, মেলান্দহ বাজার থেকে ব্রহ্মপুত্র নদী পর্যন্ত কালভার্ট রোড করা হবে। মেলান্দহকে মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো।

এসব বিষয়ে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী হাজি দিদার পাশার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এমএএম/জেডএস

** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।