ঢাকা: প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও সহিংসতার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর কাছে ইসির আস্থা এখন তলানিতে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক কঠোর বার্তায় ইউপি নির্বাচনে ‘অনিয়ম-সহিংসতা দেখতে চান না’ এমনটি জানানোর পর আরও হালে পানি পেয়েছে ইসি। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে সরকার প্রধানের ওই বার্তা পৌঁছে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় নেতা-কর্মীরা যেন বাড়াবাড়ি না করে, আওয়ামী লীগকে সে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বলে ইসি।
অন্যদিকে এদিন বিকেলেই গাজীপুরে পুলিশ সুপার হারুণ অর রশিদ, যিনি সংসদ ভবনের সামনে বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন ফারুককে পেটানোর কারণে ব্যাপক আলোচিত, তাকে গাজীপুর থেকে নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় ইসি। একইসঙ্গে শ্রীপুর ও কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও (ওসি) প্রত্যাহার করে।
কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাও যাতে না ঘটতে পারে সেজন্যও অধিক শক্ত অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, মুন্সীগঞ্জ, শেরপুর থেকে নির্বাচনী অনিয়মের বেশি অভিযোগ আসায় এসব এলাকায় বিশেষ নজর দিচ্ছে ইসি। এছাড়া দলগুলোর বিদ্রোহী প্রার্থীরাও শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্সও মোতায়েন করা হবে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি ও তিনজন অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। যেখানে যা প্রয়োজন, তাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ এ বিষয়ে বলেন, যে কোনো নির্বাচনেই নোয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রাম- এই বেল্টের লোকজন মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। অনেক শক্ত অবস্থানে যাওয়ার পরও তাদের ঠেকানো যায় না। তবে এসব বেল্টের অধিকাংশেই নির্বাচন শেষ। তবুও অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, যেন অনিয়মের ঘটনা না ঘটে।
ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে তৃতীয় ধাপে আরও শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) তৃতীয় ধাপের ৬১৬টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনী উপকরণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও নির্বাচনী উপকরণ ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে কারচুপির কারণে অন্তত ৮৫টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল করে ইসি। এছাড়া সহিংসতার কারণে প্রায় ৩০ জনের মতো নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গত ২২ মার্চ ইউপি নির্বাচন শুরু হয়েছে। শেষ হবে আগামী ৪ জুন। আর মাঝামাঝি সময়ে এসে ইসির এই ‘কঠোর হওয়া’ বা ‘সতকর্তা’ অবলম্বন কতটুকু সফলতা আনবে, সে প্রশ্ন খোদ ইসি কর্মকর্তাদের। তবুও সামনে নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে এই আশাবাদ তাদেরও।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
ইইউডি/এএ