ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩১, ৩০ জুলাই ২০২৪, ২৩ মহররম ১৪৪৬

বিনোদন

বাউল সম্রাটকে হারানোর দিন আজ

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
বাউল সম্রাটকে হারানোর দিন আজ আবদুল করিম

অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। ভাটি বাংলার এ প্রাণপুরুষ বাউলগানের অনন্য এক কিংবদন্তি।

ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের প্রেম-ভালোবাসা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতার আর অন্যায়-অবিচার ও শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার গান ছিল বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাউলসঙ্গীতের এই পথিকৃতের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের আজকের এই দিনে অগণিত ভক্তকুলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম।

১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান। দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী; যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন।

তিনি গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ-এর দর্শন থেকে। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

তিনি বাউলগানের দীক্ষা লাভ করেছেন সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন শাহ আবদুল করিম।  

বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না’, ‘তুমি রাখ কিবা মার’, ‘ঝিলঝিল ঝিলঝিল করেরে ময়ুরপংখী নাও’, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া’ এবং ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু’ অন্যতম।

এ পর্যন্ত বাউল শাহ আবদুল করিমের লেখা গানের ৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে তার রচনাসমগ্র (অমনিবাস)-এর মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো শাহ আবদুল করিমের জীবদ্দশায় তার জীবন ও কর্মভিত্তিক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘শাহ আবদুল করিম সংবর্ধন-গ্রন্থ’ (উৎস প্রকাশন) নামের এ বইটি সম্পাদনা করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ। পরে শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী ২০০৯ সালের প্রথম দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও এর আগে-পরে শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে সুমনকুমার দাশের ‘বাংলা মায়ের ছেলে : শাহ আবদুল করিম জীবনী’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘সাক্ষাৎকথায় শাহ আবদুল করিম’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘শাহ আবদুল করিম’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম’ (উৎস প্রকাশন), ‘গণগীতিকার শাহ আবদুল করিম’ (উৎস প্রকাশন) প্রকাশিত হয়।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঢাকার প্রখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয় সুমন কুমার দশের ‘শাহ আবদুল করিম : জীবন ও গান’ বইটি। এ বইটি ইতোমধ্যেই একটি প্রামাণ্য জীবনী হিসেবে বোদ্ধামহলে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। এ বইটিতে করিমের নির্বাচিত বেশ কিছু গানও সংকলিত হয়েছে।

বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ভাটির পুরুষ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এছাড়াও সুবচন নাট্য সংসদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে শাকুর মজিদের লেখা নাটক ‘মহাজনের নাও’।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
এনএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।