দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। গায়িকার পাশাপাশি সুরকার হিসাবেও পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
রুনা লায়লাই একমাত্র শিল্পী যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই তিন দেশেই সমানভাবে জনপ্রিয়। আজ ১৭ নভেম্বর প্রখ্যাত এ সংগীতশিল্পীর জন্মদিন। জীবনের ৭১ বসন্ত পেরিয়ে ৭২-এ পা রেখেছেন। আর বিশেষ এই দিনটি প্রতিবারের মত পালন করছে চ্যানেল আই। চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘তারকা কথন’-এ এদিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই শিল্পী।
বিশেষ এই দিনটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই বিশেষভাবে কাটাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। দুপুরে চ্যানেল আইতে ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে কেক কেটে অংশ নেন তিনি। অনুষ্ঠানে রুনা লায়লার জন্মদিন উদযাপনে উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী রফিকুল ইসালাম, আবিদা সুলতানা, রবি চৌধুরী, সংগীত পরিচালক মানাম আহমেদ এবং ফুয়াদ নাসির বাবু। এদিনের অনুষ্ঠানে জীবনের নানান বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কিংবদন্তি রুনা লায়লা।
জন্মদিন প্রসঙ্গে রুনা লায়লা অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, আমাকে এখনো সুস্থ রেখেছেন। সবার কাছে দোয়া চাই যেন বিধাতা আমাকে, আমার পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন। আমি যেন আরও সুন্দর সুন্দর গান শ্রোতা-দর্শককে উপহার দিতে পারি। সংগীত জীবনে দীর্ঘ ষাট বছরের চলার পথে মানুষের যে শ্রদ্ধা ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে মনে করি সবার দোয়ায় আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে রুনা লায়লা বলেন, প্রত্যেক মানুষের অর্জনের পেছনে তো সংগ্রাম, বাধার গল্পও থাকে! তবে রুনা লায়লার ক্ষেত্রে বিষয়টি যেন ভিন্ন।
তিনি জানান, আমাকে আসলে প্রথম থেকে স্ট্রাগল করতে হয়নি। আল্লাহর রহমতে, গান নিয়ে আমার কাছে সবাই এসেছে। কারও কাছে গিয়ে গান চাইতে হয়নি। সবার কাছ থেকে আদর, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আশীর্বাদ দোয়া সব পেয়েছি। বাধা দু-একটা এসেছে, আল্লাহ আমাকে তা অতিক্রম করার শক্তিও দিয়ে দিয়েছিল এবং পেরেছিও। তাছাড়া আমি কোনো বাধা খুব একটা গুরুত্ব দিইনি।
জন্মদিনে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশে পরামর্শ চাইলে রুনা লায়লা বলেন, আমার মনে হয়, এই প্রজন্মের সব শিল্পীই খুব মেধাবী। তবে ওদের একটু সুযোগ দরকার। একটু সুযোগ পেলেই তারা অনেক কিছু করতে পারবে, আমার বিশ্বাস। আমার সামর্থ্যে যতটা সম্ভব, ওদের এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কেউ আমার কাছে কোনো পরামর্শ চাইতে এলে, আমি তাকে সময় দেই, দিক নির্দেশনা দেই।
কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দেশে-বিদেশের সংগীতপ্রেমীদের কাছে পরিচিতি পেলেও শৈশবে প্রথম নাচ শিখেছিলেন রুনা লায়লা। বাবা এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। থাকতেন পাকিস্তানের করাচিতে। মা আমিনা লায়লা ছোট্ট রুনাকে ভর্তি করান বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে। চার বছর সেখানে নাচ শিখেছেন রুনা লায়লা। কিন্তু নৃত্যশিল্পী না হয়ে তিনি হলেন বাংলা গানের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী।
মাত্র ১২ বছর বয়সে লাহোর থেকে একটি সিনেমায় গান গাওয়ার প্রস্তাব পান তিনি। কিন্তু বাবা সম্মতি দেননি। গান গাওয়া নিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না, কিন্তু চলচ্চিত্রের ব্যাপারে তখন অনেকেরই ছিল নেতিবাচক ধারণা। অনেক কষ্টে বাবাকে রাজি করান রুনার মা। সিনেমার নাম ‘জুগনু’। ১৯৬৫ সালের ওই উর্দু সিনেমাতে রুনা গাইলেন ‘গুডয়ি়য়া সি মুন্নি মেরি’ গানটি। পাকিস্তান রেডিওর ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে রুনা লায়লা প্রথম বাংলা গান রেকর্ডিং করেন। দেবু ভট্টাচার্যের সুর করা গান দুটি ছিল ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো’ এবং ‘আমি নদীর মতো পথ ঘুরে’। সেই তো হলো শুরু, তারপর নদীর মতো বয়ে গেছে তার ক্যারিয়ার। যা আজ ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
এনএটি