ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

কানের ডায়েরি : এখানে-সেখানে (২)

ওগো বিদেশিনী... আমার শিউলি নাও!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৯ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫
ওগো বিদেশিনী... আমার শিউলি নাও! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কান (ফ্রান্স) থেকে: লে ইউক্যালিপটাস থেকে ক্যাপিতো, সেন্ট ক্যাসিয়েন, সেন্ট জ্যঁ হয়ে প্যালেস দু ফেস্টিভ্যালে পোঁছানোর ঠিক আগের বাস স্টেশনের নাম ভোলামবোসা। এখানে বাস থামলেই চার্লি চ্যাপলিন উঁকি দিয়ে দেখেন! বাঁ পাশে রাস্তা ও-প্রান্তের একটি ভবনে কিংবদন্তি এই অভিনেতার বিশাল আলোকচিত্র।

'দ্য কিড' (১৯২১) ছবির সেই বিখ্যাত দৃশ্য এটি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে দেয়ালের আড়াল থেকে বালককে নিয়ে উঁকি দিচ্ছেন চ্যাপলিন। কিন্তু পুলিশ তাদের পেছনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে! অবশ্য ভবনটিতে শুধু চ্যাপলিন আর জ্যাকি কুগ্যানের (বালক) ছবি দেওয়া। আর কোথাও ট্র্যাফিক সিগন্যালে খুব একটা পড়তে না হলেও এখানে রোজ সকালে নিয়মিত সেই চিত্র দেখা যায়। তাই চ্যাপলিনকে দেখেই কাটে সময়!

কান উৎসবের ৬৮তম আসরের ষষ্ঠ দিনে (১৮ মে) বড় তারকার সংবাদ সম্মেলন নেই। পরিকল্পনা সাজালাম বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন ঘুরবো। তাই প্রেস রুমে একচক্কর দিয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমার জন্য বরাদ্দ ১৪৬৫ নম্বর প্রেসবক্স খুলে দরকারি কাগজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

ফেস্টিভ্যালের আশেপাশে মোড়ে মোড়ে সুদৃশ্য লম্বা স্থাপনা দেখা যায়। এগুলোতে বিভিন্ন ছবির পোস্টারই বেশি। গোলাকৃতির স্থাপনাগুলোর ওপরে ‘কান’ লেখা। শুধু শহরের সৌন্দর্য বৃ্দ্ধিই, এসব স্থাপনার মধ্যে আছে শৌচাগারও। সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশ সুরক্ষা দুটোই হচ্ছে একসঙ্গে। এসবের সঙ্গে চারপাশে মাটি ও পাথরের নানান ভাস্কর্য আছে। এসবের এক পাশে বিভিন্ন দেশের সারি সারি প্যাভিলিয়ন। তবে তা হাতেগোনা। আর দেশগুলো তাহলে গেলো কই!

আছে আছে। কান উৎসবে তো আর পাঁচ দশটা দেশ আসে না যে, সব এক সারিতে জায়গা দেওয়া যাবে। অন্য দেশগুলো প্যাভিলিয়নের একটা অংশ মার্শে দু ফিল্ম ভবনের উল্টোদিকে। আরেকটা অংশ প্যালেস দু ফেস্টিভ্যালের অন্যপাশে। এখানটার নাম দেওয়া হয়েছে ভিলেজ ইন্টারন্যাশনালে। জাপান প্রজেক্ট সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নিলাম। জাপানের জন্য বরাদ্দ ২২৩ নম্বর প্যাভিলিয়নে ঢুকতেই একটি মেয়ে বললো- ’বো-জো!’ কিছু না বুঝেই বলে ফেললাম- 'বো-জো। ' ববকাট চুল। চোখ নড়ছে। তার হাতের দিকে তাকাতেই ঘোর কাটলো। আরে এ যে পুতুল! অন্তত এই পুতুলের সুবাদে সব দেশের প্যাভিলিয়নকে পেছনে ফেলে দিলো জাপান! আর কোনো দেশের প্যাভিলিয়নে আলাদা কিছু নেই। অভ্যর্থনাকর্মী ছাড়া সবই প্রায় একরকম।

আমেরিকান প্যাভিলয়ন অবশ্য একদিক দিয়ে আলাদা। কারণ এখানে যে কেউ ঢুকতে চাইলে ২০ ইউরো দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। ককটেল পার্টির আমন্ত্রণ থাকায় বিনামূল্যেই এই প্যাভিলিয়নও ঘুরে আসা যাবে। তার আগে সমুদ্রযান দেখে আসা যাক। ক্যাসিনোর একপাশে সাগরতীরে শত শত বিলাসবহুল নৌযান ভিড়ে আছে। এসবের বেশিরভাগই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। জেমস বন্ড সিরিজের ‍দৃশ্যায়ন যেখানে হয়, সেই পাইনউড স্টুডিওস লেখা জাহাজও দেখা গেলো। বিখ্যাতি টিভি চ্যানেল আর্টে টিভি কর্তৃপক্ষও এসেছেন নদীপথে। এবারের উৎসবে প্রতিযোগিতা-সহ অন্যান্য বিভাগে নির্বাচিত ছবির স্বত্ত্ব কিনেছে তারা। একজনকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেলো খাবার পাশে রেখে।

এবার যেতে হবে আমেরিকান প্যাভিলিয়নে। পথে বেশ কয়েকটি রেনোর দামি গাড়ি চোখে লাগলো। এগুলোতেই চড়েই তারকারা হোটেল থেকে কানের লালগালিচায় আসেন। লালগালিচার ছবি তোলার জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থা করা চত্বরে অন্যান্য বছরের উৎসবে তোলা তারকাদের ছবি আর ক্ল্যাপস্টিকের ছাপ থাকা কাপড়ের দিকেও সবার চোখ যাচ্ছে।

তারকা বলে কথা! এই তারকাদের নিয়ে প্রতিদিনই এখন উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন। উৎসবকে ঘিরে সাজানো এসব প্রকাশনা বিনামূল্যেই দেওয়া হচ্ছে আয়োজকদের আমন্ত্রণে আসা সংবাদর্মীদের। তবে কিছু ম্যাগাজিন বিক্রিও হচ্ছে। এমন একটি দোকানে গদারের মুখ দেখে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়াতেই হলো। এর একটু সামনে স্পার্কলিং ওয়াটারের বিশাল বোতল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এটির প্রচারণার জন্য সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিন তরুণী।

সমুদ্র সৈকতের দিকে দুপুর থেকেই লোক সমাগম বাড়তে থাকে। এখানে বেশকিছু রেস্তোরাঁয় সময় কাটান তারা। কেউ বেঞ্চে বসেন। সূর্যের আলো ম্রিয়মান হতে শুরু করেছে। বোঝা গেলো রাত ৯টার বেশি বেজে গেছে। গত কয়েকদিনে এটা চেনা চিত্র। তবে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে অচেনা একটা মুহূর্ত এলো সামনে। ফ্রান্সজুড়ে মেয়েরা শর্টস, স্কার্ট, কাঁধখোলা গাউন আর প্যান্ট-শার্টই পরে। তাই এখানে শাড়ি পরা কাউকে দেখার আশা করা বোকামি ছাড়া কিছু মনে হবে না। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকার ফাঁকে হঠাৎ সেই অচেনা দৃশ্যটাই দেখা গেলো। ফরাসি দুটি মেয়ে শাড়ি পরে পার্টিতে যাচ্ছে। মনে পড়ে গেলোে এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় গান- ‘ওগো বিদেশিনী, তোমার চেরি ফুল দাও, আমার শিউলি নাও...। ’

(বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে www.rabbitholebd.com এর সৌজন্যে। )

ফ্রান্স সময় : ০১২৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫
জেএইচ/এটি/

** অ্যানিমেশনের দিন ও অন্যান্য
** এ যে সেলফির বন্যা!
** লালে-সবুজে ঐশ্বরিয়া যেন রূপবতী দেবী!
** দিনভর কান-টান উত্তেজনা!
** কানের ডায়েরি: এখানে-সেখানে
** অনুরোধের ঢেঁকি, টিকেট প্লিজ...
** সোনম যখন নীল পরী!
** রূপে-গুণে অনন্যা কেট ব্ল্যানচেট
** দেখা দিলেন ঐশ্বরিয়া
** পাঁচ ঘণ্টায় তিন রকম সোনম
** কানের লালগালিচায় ‘পরবাসিনী’র নায়িকা
** জনারণ্যে জমজমাট সব
** দেখা দিলেন ঐশ্বরিয়া
** হঠাৎ ডায়েন ক্রুজারের বিকিনি!
** ম্যাকোনাহে ও নাওমি ওয়াটসের সঙ্গে কিছুক্ষণ
** শর্টস আর স্কার্টের ভিড়ে তারা দু'জন
** কানে শোনা, কানে দেখা
** কান পেতে রই
** সব আকর্ষণ কানজুড়ে
** এলেন উডি অ্যালেন!
** বন্ডকন্যা ও বন্ডের অর্ধাঙ্গিনীর সামনে
** কানে সামনের সারিতে নারীরা
** মেক্সিকান রূপের রানীর গল্প
** বাংলাদেশ ভালো খেলছে শুনেছি : শার্লিজ থেরন
** কান উৎসবের পর্দা উঠলো
** কানের লালগালিচায় ক্যাটরিনা
** কান নিয়ে কানাকানি!
** ষাট বছরে স্বর্ণপাম
** কান উৎসবের খুঁটিনাটি
** কানে চোখ রাখুন
** প্যারিসে এক টুকরো কান
** রোড টু কান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।