ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ফরাসি ছবির বড় মিয়া!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
ফরাসি ছবির বড় মিয়া! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কান (ফ্রান্স) থেকে: ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটিকে শারীরিক আকৃতির কারণে আরও বিশাল মনে হয়! দিনে ১৪ বোতল ওয়াইন সাবাড় করে অকপটে তা স্বীকারও করেন। নাম জেহা দেফাদিউ।

পাঁচ দশক ধরে ফরাসি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তিনিই। অথচ ১৩ বছর বয়সে ছবি আঁকা শিখবেন বলে স্কুল ছেড়েছিলেন। কী কারণে অভিনেতা হলেন? 'কোনো কাজ করতে হবে না বলেই অভিনয় করি!' তার উত্তর শুনে হাসির ফোয়ারা বয়ে গেলো সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। এরপর বললেন, 'শুটিংয়ে থাকা উপভোগ করি। সেটের মানুষগুলোর সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে। '

ইতালিয়ান নির্মাতা বার্নার্দো বারতোলুচ্চি, ফরাসি নির্মাতা ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো, বারত্রান্দ ব্লিয়াঁ, ফরাসি-সুইস নির্মাতা জ্যঁ-লুক গদার, ইতালিয়ান নির্মাতা লুইজি কোমেনচিনি, রুশ নির্মাতা ভ্লাদিমির মেনশোভ, ব্রিটিশ নির্মাতা রোলান্ড জোফে, ফ্রেঞ্চ- আলজেরিয়ান নির্মাতা অ্যালেইন শাবাতের মতো চলচ্চিত্র-গুরুদের সঙ্গে কাজ করেছেন জেহা।




'অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্স ভার্সেস সিজার' (১৯৯৯), 'অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্স : মিট ক্লিওপেট্রা' (২০০২), 'অ্যাস্টেরিক্স অ্যান্ড ওবেলিক্স : গড সেভ ব্রিটনিয়া' (২০১২)- এ তিনটি ছবিতে ফরাসি কমিকসের জনপ্রিয় চরিত্র ওবেলিক্সের ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। মূলত এজন্যই তার পরিচিতি দুনিয়াজোড়া। ২০০৫ সাল পর্যন্তও তিনি ছবিপ্রতি সবচেয়ে বেশি (৮ লাখ ইউরো) পারিশ্রমিক নিতেন। সবচেয়ে বেশিবার (১৬) সিজার মনোনয়ন তারই দখলে।

বযসের কোঠা ৬৬ পেরোলেও চালচলনে কোথায় যেন একটা শিশুসুলভ ছায়া আছে জেহার মধ্যে। সংবাদ সম্মেলনেও শিশুদের মতোই চঞ্চলতা দেখা গেলো তার মধ্যে। আগের দিনগুলোর সংবাদ সম্মেলনে তারকারা প্রশ্নোত্তর ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির পাশাপাাশি জল পান করেছেন। তবে সেসব ছিরো এক চুমুক করে। কিন্তু জেহা দেফাদিউ এক নিঃশ্বাসে পুরো বোতল খালি করে ফেললেন! তার জলপান দেখে দু'একজনের মুখে হাসিও দেখা গেলো।

১৯৯২ সালের কান উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগের ছবির বিচারকদের প্রধান ছিলেন জেহা। এবার তিনিই পুরস্কার প্রার্থী! প্রতিযোগিতা বিভাগে স্বর্ণপামের জন্য লড়ছে তার নতুন ছবি 'ভ্যালি অব লাভ'। আজ কান উৎসবের দশম দিনে বিকেল ৩টায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। তার আগে সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি। সঙ্গে সহশিল্পী ইজাবেল হাফাত ও পরিচালক গুইলুম নিকোলুক্স।



 

জেহা ও ইজাবেল এর আগে দু'বার কাজ করেছেন। প্রথমবার ১৯৭৪ সালে 'গোইং প্লেস' ছবিতে। শেষবার ৩৫ বছর আগে! 'লুলু' ছবিতে। 'ভ্যালি অব লাভ' ছবির গল্প যেন তাদের বাস্তব জীবনের বার্তা দেয়। নিজ নিজ নামের চরিত্রেই আছেন তারা। এখানে দু'জন অভিনয় করেছেন অনেক বছর পর দেখা হওয়া দম্পতির ভূমিকায়। তবে উভয়ে পুত্রশোকে কাতর। ছয় মাস আগে ছেলে আত্মহত্যা করেছে।

হঠাৎ একদিন ছেলের লেখা একটি চিঠি পান জেহা ও ইজাবেল। তাতে লেখা- '২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর তোমাদেরকে মৃত্যু উপত্যকায় দেখতে চাই। দু'জনকেই। তোমাদের মনে হতে পারে এটা অবসাদগ্রস্ত কোনো ছেলের পাগলামি। কিন্তু আমি সব বুঝেই বলছি। ' এরপর ছেলের ইচ্ছাপূরণ করতে ক্যালিফোর্নিয়ার মৃত্যু উপত্যকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন তারা। এই যাত্রাপথে অনেকদিনের জমে থাকা সব কথা ভাগাভাগি করতে থাকেন জেহা ও ইজাবেল। ঠিক অনেকদিন পর একসঙ্গে কাজ করতে আসা অভিনয়শিল্পীদের মতো আলাপচারিতা!

ক্যামেরার সামনে ও বাইরে দুই জায়গাতেই জেহা সাবলীল। তাকে দেখলে মনে হয় অভিনয়টা ডালভাত! যে কেউই করতে পারে! এটাই সত্যিকারের অভিনেতার গুণ।



প্রতিযোগিতা বিভাগের অন্য ছবি
আজ বৃহস্পতিবার (২১ মে) শুরুতে সকাল সাড়ে ৮টায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে প্রতিযোগিতা বিভাগের আরেক ছবি 'ক্রনিক'-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে রাতেও দেখানো হয় এটি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মাইকেল ফ্রাঙ্কো। ২০১২ সালে মেক্সিকান এই নির্মাতার 'আফটার আফটার লুসিয়া' আনসার্টে রিগার্ড পুরস্কার পায়। এর গল্প এক ব্যক্তিকে ঘিরে যিনি ঘরে ঘরে গিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষকে সেবা দেন ও পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করেন। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন টিম রোথ। মজার বিষয় হলো, তিন বছর আনসার্টেন রিগার্ড বিভাগের বিচারকদের প্রধান ছিলেন মার্কিন এই অভিনেতা। তখনই তিনি মাইকেল ফ্রাঙ্কোর ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা দেখান। এজন্য মূল চরিত্রটি মেয়ের হলেও টিমের কথা ভেবে চিত্রনাট্যে পরিবর্তন আনা হয়।

এ ছাড়া সাল দু সোসানতিয়েমেতে দেখানো হয় আগের দিন প্রদর্শিত জ্যাক অদিয়াদের 'ধীপান'  এবং হো সিয়াও সিয়েনের 'দ্য অ্যাসাসিন'।

আনসার্টেন রিগার্ড
এ বিভাগে এদিন প্রদর্শিত সব ছবি আগেও দেখানো হয়েছে। সাল দিবুসিতে সকালে 'মাসান', দুপুরে 'অ্যালিয়াস মারিয়া', বিকেলে 'ম্যাডোনা' ও 'অ্যাই অ্যাম অ্যা সোলজার' এবং রাতে ছিলো 'চৌথি কুত'। এ ছাড়া সাল বাজিনে দুপুরে প্রদর্শিত হয়েছে 'দ্য আদার সাইড'।

তারার আলো
এদিন উৎসব উপলক্ষে কানে ছিলেন অনেক তারকা। কেউবা সমুদ্র সৈকতে, কেউ লালগালিচায়, আবার কেউ শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন। এর মধ্যে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন অ্যান্টোনিও ব্যান্ডেরাস,ভিনসেন্ট ক্যাসেল, ম্যারিয়ন কতিলার, বেনিসিও দেল তোরো, ভ্যালেরি দনজেল্লি, গোলশিফতা ফারাহানি, মাইকেল ফাসবেন্ডার, ম্যাকেঞ্জি ফয়, জ্যাক গিলেনহাল, নিকোলাস হল্ট, সোফি মার্সো, সিয়েনা মিলার, টিম রোথ, ল্যাম্বার্ট উইলসন প্রমুখ।



অন্যান্য বিভাগ
এদিন প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরে অ্যানিমেটেড ছবি 'দ্য লিটল প্রিন্স'-এর উদ্বোধনী প্রদর্শন হয়। সন্ধ্যায়ও গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে এটি দেখানো হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মার্ক অসবর্ন। ফটোকল আর সংবাদ সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন যারা এতে কণ্ঠ দিয়েছেন।

সমুদ্র সৈকতে ছবি দেখার আয়োজন সিনেমা ডি লা প্লাজ বিভাগে রাত ৯টায় ছিলো এদুয়াঁ মলিনা পরিচালিত 'হাইবারনেটাস' (১৯৬৯)।

আগামী আকর্ষণ
উৎসবের ১১তম দিনে হবে 'ম্যাকবেথ' ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। এর দুই তারকা ম্যারিয়ন কতিলার ও মাইকেল ফাসবেন্ডার ফটোকল ও সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। এ ছাড়া সমাপনী ছবি 'আইস অ্যান্ড দ্য স্কাই'-এর পয়লা প্রদর্শনীও হয়ে যাবে আজ। তারপর বাকি থাকবে আর একদিন। এরপরেই সাঙ্গ হবে উৎসব।

ফ্রান্স সময় : ১৯৩২ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৫
জেএইচ

** বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।