ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‌তামিল গেরিলার কান জয়

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
‌তামিল গেরিলার কান জয় ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কান (ফ্রান্স) থেকে: কান উৎসবকে বরাবরই বলা হয় আনপ্রেডিক্টেবল। আগে থেকে বলা যায় না এখানে কোন ছবি সেরা হবে।

কারণ কানের বিচারকরা বরাবরই যাবতীয় হিসাব-নিকাশের বাইরে থাকেন। সে ধারাবাহিকতা বজায় রইলো বলে অপ্রত্যাশিতভাবে পাম দ’র (স্বর্ণপাম) জিতলো জ্যাক অদিয়ার পরিচালিত ফরাসি ছবি 'ধীপান'। এর গল্প ফ্রান্সে পালিয়ে আসা এক তামিল গেরিলাকে ঘিরে। ২৪ মে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে শুরু হয়ে রাত আটটায় (বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১২টা) গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণী শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো ১২ দিনের মহাযজ্ঞ। এবার ছিলো ৬৮তম আসর।

পুরস্কার নেওয়ার সময় জ্যাকের সঙ্গে ছিলেন 'ধীপান' ছবির দুই অভিনয়শিল্পী অ্যান্থনিথাসান জেসুথাসান ও দক্ষিণ ভারতের মঞ্চ অভিনেত্রী কালিয়েশ্বরী শ্রীনিবাসন। স্বর্ণপাম গ্রহণ করে অ্যান্থনিথাসানকে ধরে সামনে নিয়ে আসেন ৬৩ বছর বয়সী এই ফরাসি নির্মাতা। অ্যান্থনিথাসান সত্যিকারেরই তামিল যোদ্ধা ছিলেন। স্বর্ণপাম জয়ের পেছনে তার অবদানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বোঝালেন জ্যাক।

এবার মূল প্রতিযোগিতা বিভাগ ছিলো মোট ১৯টি ছবি। জোয়েল ও এথান কোয়েনের নেতৃত্বে বিচারকরা যে বড়সড় চমক জমা রেখেছেন তা কে জানতো! কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয় এবং ফরাসি অভিনেত্রী সেসিল ডি ফ্রান্স স্বর্ণপাম তুলে দেন জ্যাকের হাতে। এর সুবাদে গাস ফন স্যান্ট, ন্যানি মোরেত্তি, পাওলো সরেন্তিনোর মতো খ্যাতিমান নির্মাতাদের পেছনে ফেলে নিজের দেশেই সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারটি রাখার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের কান উৎসবে 'অ্যা সেলফ-মেড হিরো'র জন্য সেরা চিত্রনাট্য এবং ছয় বছর আগে 'অ্যা প্রফেট'-এর জন্য গ্র্যাঁ প্রিঁ পুরস্কার যায় তার ঘরে।

অভিনয়শিল্পীদের আনন্দাশ্রু
স্বর্ণপামের মতো সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী বিভাগেও দেখা গেলো চমক। স্টেফানি ব্রিজের পরিচালনায় 'দ্যা মেজার অব অ্যা ম্যান' ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার বাগিয়েছেন ভিনসেন্ত লান্দন। দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর পরিবারের কথা ভেবে সুপারমার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীর চাকরিতে যোগ দেওয়া কর্মচারীর ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি। নাম ঘোষণার পরপরই তার চোখ আনন্দে ভিজে ওঠে। মঞ্চে এসে পুরস্কার গ্রহণের আগে আবেগাপ্লুত ৫৫ বছর বয়সী এই ফরাসি অভিনেতা একে একে সব বিচারককে জড়িয়ে ধরেন। তার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী মিশেল রড্রিগেজ৷

অভিনেত্রীদের মধ্যে সেরা পুরস্কার ভাগাভাগি করেছেন আমেরিকার রুনি মারা ও ফ্রান্সের ইমানুয়েলে ব্যাকো। টড হায়েন্স পরিচালিত 'ক্যারল' ছবিতে উচ্চাভিলাষী আলোকচিত্রী ও সমকামী চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় রুনিকে এনে দিয়েছে এই পুরস্কার৷ ৩০ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেত্রী নিজেও হয়তো ভাবেননি পুরস্কার পাবেন। সেজন্যই অনুপস্থিত ছিলেন সমাপনীতে৷

এদিকে মিওয়েনের 'মাই কিং' ছবিতে স্বামীভক্ত স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ইমানুয়েলে ব্যাকো। অনুভূতি জানাতে গিয়ে কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তার কণ্ঠ। ৪৭ বছর বয়সী এই ফরাসি অভিনেত্রী-নির্মাতা পরিচালিত 'স্ট্যান্ডিং টল' ছবির মাধ্যমে দিয়েই গত ১৩ মে এবারের উৎসবের উদ্বোধন হয়।

হাঙ্গেরির জন্য স্মরণীয় আসর
কানের ইতিহাসে এবারই প্রথম হাঙ্গেরির কোনো ছবি অংশ নিলো। নাম- 'সান অব সাউল'। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন এর পরিচালক লাজলো নেমেস। সমালোচকদের রায়ে প্রতিযোগিতা বিভাগে আগের দিন ফিপরেস্কি পুরস্কার জেতার পর এবার উৎসবের দ্বিতীয় সম্মানজনক পুরস্কার গ্র্যাঁ প্রিঁ  জিতেছেন ৩৮ বছর বয়সী এই হাঙ্গেরিয়ান। তার ছবিতে নাৎসীদের গণহত্যার গল্প বলা বিচারকদের মুগ্ধ করেছে।

অন্যান্য পুরস্কার
জুরি প্রাইজ গেছে ইওর্গেস লানটিমসের হাতে। 'দ্য লবস্টার' ছবিটি বানিয়ে পুরস্কার জিতলেন এই গ্রিক পরিচালক। ৪৫ দিনের মধ্যে যুতসই সঙ্গী খুঁজে না নিলে জন্তুতে রূপান্তর হওয়া মানুষের কাল্পনিক সমাজকে দেখিয়েছেন তিনি।

মার্শাল আর্ট নিয়ে ‘দ্য অ্যাসাসিন' ছবিটি বানিয়ে তাইওয়ানের হো সিয়াও সিয়েন নিজের নামের পাশে লিখিয়েছেন সেরা পরিচালকের সম্মাননা। ঘরে ঘরে গিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষকে সেবাদান ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার হৃদয়ছোঁয়া চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার জিতেছেন মেক্সিকোর মিশেল ফ্রাঙ্কো৷ 'ক্রনিক' নামের ছবিটি তারই বানানো।

জীবনের প্রথম ছবির জন্য ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছেন কলম্বিয়ার সিজার অগাস্তো অ্যাসভেদো (ল্যান্ড অ্যান্ড শেড)। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন এ বিভাগের বিচারক স্যাবিন আজেমা।

পুনরায় সব ছবি এবং সংবাদ সম্মেলন
সমাপনী দিনে সকাল থেকে রাত অবধি সাল দিবুসি, সাল বুনুয়েল ও সাল দ্যু সোসেনতিয়েমে আবার মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের ছবিগুলো দেখানো হয়। এদিকে পুরস্কার বিতরণীর পর আমেরিকার কোয়েন ভাইদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারক ফরাসি অভিনেত্রী সোফি মার্সো, ব্রিটিশ অভিনেত্রী সিয়েনা মিলার, স্প্যানিশ অভিনেত্রী রসি ডি পালমা, মার্কিন অভিনেতা জ্যাক গিলেনহাল, মেক্সিকান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক গুইলারমো দেল তোরো, কানাডিয়ান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও অভিনেতা হাভিয়ার দোলান এবং মালির সুরকার, গায়ক ও গীতিকার রকিয়া ট্রাওর। এরপর একে একে হাজির হন বিজয়ীরা। সবশেষে দেখা দেন প্রথমবার স্বর্ণপাম জেতা জ্যাক অদিয়ার।

সমাপনী ছবি
ওদিকে পুরস্কার প্রদানের পরপরই শুরু হয় সমাপনী ছবি লুক জ্যাকের ‘আইস অ্যান্ড দ্য স্কাই'। যাকে ঘিরে এই ছবি, সেই পরিবেশবিজ্ঞানী ক্লদ লরিয়াস লালগালিচা মাড়িয়ে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। উদ্বোধনীর মতো সমাপনী অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেন ফরাসি অভিনেতা ল্যাম্বার্ট উইলসন। পুরস্কার বিতরণী ছাড়া ছিলো চলচ্চিত্রের শৈল্পিক দিক নিয়ে মনোমুগ্ধকর নৃত্য, মার্কিন অভিনেতা জন সি. রেইলি এবং বেঞ্জামিন ক্লেমেন্তেইনের পৃথক সংগীত পরিবেশনা।



একনজরে কান পুরস্কার ২০১৫


স্বর্ণপাম (পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র) : ধীপান (পরিচালক: জ্যাক অদিয়ার, ফ্রান্স)

গ্র্যাঁ প্রিঁ : সান অব সাউল (পরিচালক: লাজলো নেমেস; হাঙ্গেরি)

জুরি প্রাইজ : দ্য লবস্টার (পরিচালক : ইওর্গেস লানটিমস, গ্রিস)

সেরা পরিচালক : হো সিয়াও সিয়েন (ছবি : দ্য অ্যাসাসিন, তাইওয়ান)

সেরা চিত্রনাট্য : ক্রনিক (মিশেল ফ্রাঙ্কো, মেক্সিকো)

ক্যামেরা দ'র : সিজার অগাস্তো অ্যাসভেদো (ল্যান্ড অ্যান্ড শেড, কলম্বিয়া)

সেরা অভিনেতা : ভিনসেন্ত লান্দন (দ্য মেজার অব অ্যা ম্যান; ফ্রান্স)

সেরা অভিনেত্রী (যৌথভাবে) : রুনি মারা (ক্যারল; আমেরিকা) এবং ইমানুয়েলে ব্যাকো (মাই কিং, ফ্রান্স)

পাম দ’র (স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র) : ওয়েভস নাইনটি এইট (পরিচালক ইলি দিগার; লেবানন)

স্বর্ণপাম (সম্মানসূচক) : অ্যাগনেস বারদা (ফ্রান্স)

আনসার্টেন রিগার্ড
সেরা ছবি : রামস' (পরিচালক : গ্রিমুর আকোনারসন, আইসল্যান্ড)
জুরি প্রাইজ : দ্য হাই সান (দালিবর মেতানিচ, ক্রোয়েশিয়া)
সেরা পরিচালক : কিয়োশি কুরোসাওয়া (জার্নি টু দ্য শোর, জাপান) 
আনসার্টেন ট্যালেন্ট প্রাইজ : ট্রেজার (কর্নেলিউ পোরামবোয়াউ, রোমানিয়া)
প্রমিজিং ফিউচার প্রাইজ (যৌথভাবে) : নীরাজ গাইয়ান (ছবি : মাসান, ভারত), ইদা পানাহাদেহ (ছবি : নাহিদ, ইরান)

সিনেফন্ডেশন
সেরা ছবি : শেয়ার (পিপা বিয়াঙ্কো, যুক্তরাষ্ট্র)
দ্বিতীয় পুরস্কার : লস্ট কুইনস (লোকাস পারদিদাস, চিলি)
তৃতীয় পুরস্কার (যৌথভাবে) : দ্য রিটার্ন অব আরকিন (মারিয়া গুসকোভা, রাশিয়া) এবং ভিক্টর এক্সএক্স (গারিদো লোপেজ, স্পেন)

ভালকান অ্যাওয়ার্ড : 'সান অব সাউল' ছবির কারিগরি সব শিল্পী, তামাস জানি (শব্দ প্রকৌশলী)

ফ্রান্স সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, ২৪ মে  ২০১৫
জেএইচ


** বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর

** কান থাকবে নাকি চলে যাবে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।