ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

এশিয়ার হাত ধরে ফরাসি সৌরভ

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৫
এশিয়ার হাত ধরে ফরাসি সৌরভ

কান (ফ্রান্স) থেকে: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রবোদ্ধা ও সাংবাদিকদের কারও গুঞ্জনই সত্যি হলো না। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের ছবিই জিতলো কান চলচ্চিত্র উৎসবের উৎসবের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার পাম দ’র (স্বর্ণপাম)।



গত ২৪ মে চূড়ান্ত ফয়সালায় ইউরোপের দেশ ফ্রান্সের কান উৎসবে বিজয় পতাকা ওড়ালো স্বাগতিকরা। ৬৮তম আসরে এই পুরস্কার প্রবর্তনের ষাট বছর পূর্তিতে ফ্রান্সেই এটা রেখে দেওয়ার গৌরব এনে দিলো ফরাসি পরিচালক জ্যাক অদিয়ারের ‘ধীপান’।

রাতটা ছিলো ফরাসি চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য আনন্দের। একই সঙ্গে ইতালিয়ানদের জন্য হয়ে রইলো বিষাদের। এবারের উৎসবে মূল প্রতিযোগিতা পর্বে অংশ নেয় ১৯টি ছবি। এর মধ্যে ছিলো ইতালির তিনটি। কিন্তু এগুলোকে শুন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে।

কান উৎসবের ১২ দিন ধরেই দর্শক-সমালোচকদের মধ্যে আলোচনা চলছিলো স্বর্ণপাম নিয়ে। তবে চলচ্চিত্র সমালোচকদের মধ্যে এর ভালো-মন্দ নিয়ে দুই ধরনের মত দেখা গেছে। ‘ধীপান’কে বিচারকরা স্বর্ণপাম দেওয়ায় সমালোচক ও দর্শকদের একাংশ নারাজ। ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের ইউরোপীয় সমালোচক জে ওয়েইসবার্গ বলেছেন, ‘এটা পুরোপুরি হতাশাজনক ঘটনা। এতে কেউই খুশি হয়নি। এ ধরনের ছবির স্বর্ণপাম পাওয়া কান উৎসবের সঙ্গে মানানসই নয়। ’

কানে ফরাসি সৌরভ ছড়ালেও এশিয়ান বিষয়বস্তুর হাত ধরেই শেষ হাসি হাসলো ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। কারণ ‘ধীপান’-এর গল্প শ্রীলঙ্কার এক প্রাক্তন তামিল গেরিলাকে ঘিরে। এ ছবিকে স্বর্ণপাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত সচেতন রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে বলে মন্তব্য পর্যবেক্ষকদের। হলিউড রিপোর্টারের সমালোচক স্কট রক্সবোরো বলেন, ‘আমি এটাকে জ্যাক অদিয়ারের সেরা ছবি মনে করি না। আরও আগেই স্বর্ণপামজয়ের মতো কাজ দেখিয়েছেন তিনি। তবে ধীপানের মাধ্যমে হলেও তাকে সম্মান দেওয়ার পাশাপাশি ছড়ানো হলো রাজনৈতিক বার্তা। ’

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন এই চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৮তম আসরে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন হলিউডের খ্যাতিমান পরিচালক জোয়েল কোয়েন ও এথান কোয়েন। সমালোচকরা হতাশ হলেও নিজেদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে উৎসবের শেষ দিন গত রোববার এথান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিচারকেরা সর্বসম্মতিক্রমে ধীপানকে সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের কাছে এটা চমৎকার ছবি মনে হয়েছে। ’

সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীর পুরস্কারও রয়ে গেছে ফ্রান্সেই। ‘দ্য মেজার অব অ্যা ম্যান’-এর জন্য সেরা অভিনেতার মুকুট জিতেছেন ভিনসেন্ত লান্দন। সুপারমার্কেটের নিরাপত্তকর্মীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন ৫৫ বছর বয়সী লান্দন।

অবশ্য অভিনেত্রী বিভাগে ফ্রান্সের ইমানুয়েলে ব্যাকোকে পুরস্কারটি ভাগাভাগি করতে হয়েছে মার্কিন তারকা রুনি মারার সঙ্গে। এ নিয়ে তৃতীয়বার কানে পুরস্কার পেলেন ইমানুয়েলে। মজার বিষয় হলো, প্রতিবারই যৌথভাবে সেরা হয়েছেন তিনি! স্বদেশি অভিনেতা তাহের রহিমের কাছ থেকে ‘মাই কিং’ ছবির জন্য পুরস্কার গ্রহণের পর ব্যাকো বলেন, ‘পুরস্কার ভাগ করা মানে কাঁধের ওজন কমে যাওয়া। আরেক অভিনেত্রীর সঙ্গে এ পুরস্কার ভাগ করতে পেরে আমার অনেক আনন্দিত। আজকের সন্ধ্যা আমার বাঁধনহারা স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে। ’ নিজের সহশিল্পী ভিনসেন্ত ক্যাসেলকে ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি তিনি।

রুনি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো কানে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতলেন ‘ক্যারল’-এ সমকামী আলোকচিত্রী চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে। যদিও এ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে কেট ব্ল্যানচেটের সম্ভাবনা দেখেছিলেন বোদ্ধারা।

হাঙ্গেরির তরুণ নির্মাতা লাজলো নেমেস প্রথমবারের মতো তার দেশের হয়ে উৎসবে এসেছিলেন নাৎসী বর্বরতার ছবি ‘সান অব সাউল’ নিয়ে। তিনি জিতেছেন পাম দ’রের পরেই সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন অভিনেতা ম্যাডস মিকেলসেন।

লাতিন আমেরিকানদের দাপটও লক্ষ্য করা গেলো এবার। ‘ক্রনিক’ ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জিতেছেন মেক্সিকোর মিশেল ফ্রাঙ্কো। এতে ঘরে ঘরে গিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষকে সেবাদান ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়া এক ব্যক্তিকে ঘিরে হৃদয়ছোঁয়া চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি৷

লাতিনদের মধ্যে জীবনের প্রথম ছবি পরিচালনার জন্য ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছেন কলম্বিয়ার সিজার অগাস্তো অ্যাসভেদো, ছবির নাম ‘ল্যান্ড অ্যান্ড শেড’।

ফ্রান্সের মতো ইউরোপের আরেক দেশ গ্রিসে গেছে জুরি প্রাইজ। এটি জিতেছে ‘দ্য লবস্টার’। ৪৫ দিনের মধ্যে যুতসই সঙ্গী খুঁজে না নিলে জন্তুতে রূপান্তর হয়ে যাওয়া কাল্পনিক সমাজকে নিয়ে ছবিটি বানিয়েছেন ইওর্গেস লানটিমোস।

স্বর্ণপাম বগলদাবা করতে পারলেও সেরা পরিচালকের পুরস্কার অবশ্য অদিয়ার জেতেননি। তাইওয়ানের ঐতিহ্য মার্শাল আর্ট নিয়ে নির্মিত ‘দ্য অ্যাসাসিন’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক হয়েছেন দেশটির প্রবীণ নির্মাতা হো সিয়াও সিয়েন।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পাম দ’র (স্বর্ণপাম) এসেছেন এশিয়ায়। ‘ওয়েভস নাইনটি এইট’ ছবির জন্য এটি জিতেছেন লেবাননের পরিচালক ইলি দিগার। ফরাসি সৌরভের মাঝে কানে এবার এশীয়দেরও ছিলো আধিপত্য!

(বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে www.rabbitholebd.com এর সৌজন্যে।

ফ্রান্স সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৫
জেএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।