আবহমান বাংলার ঐতিহ্য যাত্রাশিল্পের চলমান সমস্যা-সংকট নিরসনে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখা হচ্ছে যাত্রাপালার নামে অশ্লীলতাকে। এসব অশালীন কার্যকলাপ প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ নৈশ আদালত গঠনের দাবি উঠেছে।
অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- জাতীয় যাত্রামঞ্চ প্রতিষ্ঠা, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে স্থায়ী যাত্রামঞ্চ নির্মাণ, সিনেমা হলের মতো বিভিন্নস্থানে যাত্রামঞ্চ নির্মাণের জন্য ঋণপ্রদান বা আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা, শিল্পকলার উদ্যোগে প্রতি বছর জাতীয় যাত্রা উৎসবের আয়োজন, শিল্পকলা একাডেমীতে পৃথক যাত্রা বিভাগ চালু, দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের কোটাভিত্তিক পৃথক ভাতা বা অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা, নিবন্ধিত না হওয়া দলগুলোকে চলতি বছরের মধ্যে নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং অশ্লীলতার সঙ্গে যুক্ত দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা।
সংগঠনটির প্রতিনিধি দলে ছিলেন যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি যাত্রানট মিলন কান্তি দে, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার জসিম, যুগ্ম সম্পাদক এমএ মজিদ, কোষাদক্ষ সুদর্শন চক্রবর্তী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এম আলীম, দপ্তর সম্পাদক মোজাম্মেল হক এবং নির্বাহী সদস্য আলতাফ হোসেন। তারা যাত্রার নামে অশ্লীলতা প্রতিরোধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি জেলা ও পুলিশ প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান, জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা-সাংবাদিক ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়, জেলায় জেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ, পত্রপত্রিকার সঙ্গে যৌথ আয়োজনে সেমিনার ও মতবিনিময় এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ।
এ ছাড়া যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের নিজস্ব উদ্যোগে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক যাত্রাশিল্পের বিলুপ্তপ্রায় উপকরণ সংরক্ষণ এবং মহড়া ও দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের পুনর্বাসনকল্পে ঢাকা বা এর পাশ্ববর্তী এলাকায় একটি যাত্রাভবন নির্মাণ, প্রতি বছর তিন মাস মেয়াদী যাত্রাকর্মশালা, প্রতিটি যাত্রাদলে দেশীয় যাত্রাপালা মঞ্চায়নের ব্যবস্থা এবং দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনের বিষয়ে মহাপরিচালককে অবহিত করা হয়। এ সময় ৫১ সদস্যের কমিটি ছাড়াও যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে ৩৫ সদস্যের স্থায়ী কমিটির তালিকা দেওয়া হয়।
যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন শিল্পকলার মহাপরিচালক। তার মতে, সংস্কৃতির শেকড়ের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে উত্থাপিত দাবিগুলো খুবই ন্যায়সঙ্গত। তিনি আশা করছেন, ধাপে-ধাপে এসব দাবির বাস্তবায়ন হবে। শীত মৌসুমে দেশীয় পালার সমন্বয়ে পরিষদের উদ্যোগে ১৫ দিনের একটি যাত্রাউৎসব আয়োজনে সরকারি সহায়তারও আশ্বাস দেন তিনি। তার কথায়, ‘যাত্রাশিল্পের উন্নয়ন আর শিল্পকলা একাডেমীর উন্নয়ন পৃথক কোন বিষয় নয়। যাত্রাশিল্পের অস্তিত্বরক্ষা ও অগ্রগতিতে শিল্পকলা একাডেমী যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের নবগঠিত কমিটির নিরন্তন সংগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করবে। ’
বাংলাদেশ সময় : ১৬০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৫
জেএইচ