ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

জ্ঞানেন্দ্র হয়ে সৌমিত্র মঞ্চে পুরোটা সময়

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫
জ্ঞানেন্দ্র হয়ে সৌমিত্র মঞ্চে পুরোটা সময় মঞ্চে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় / ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মঞ্চে এলেন জ্ঞানেন্দ্র হয়ে। জ্ঞানেন্দ্র আলকেমি চর্চা করেন।

যে বাড়িটায় থাকেন, সেখান থেকে কাছের রেলস্টেশনটারও দূরত্ব চার ক্রোশ। বাড়িটা ভাঙাচোরা। বিদ্যুৎ নেই। কেরোসিনে আলো জ্বলে। পাশ দিয়ে চলে গেছে ছাড়িগঙ্গা। লাঠি হাতে, সাদা চুল-দাড়ির সৌমিত্র যখন মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন, তখন শিল্পকলা একাডেমীর বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

ভেতরে বসে দর্শক হয়তো মেলানোর চেষ্টা করছেন আধঘণ্টা আগের সৌমিত্রকে, যখন তিনি উদ্বোধনী মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বসেছিলেন আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও আসাদুজ্জামান নূরের মাঝের চেয়ারটায়। কিন্তু মেলানো যে বড় কষ্ট! এ দুই সময়ের মধ্যে তফাৎ খুব একটা না থাকলেও, চরিত্রে আছে। তিনি তখন ছিলেন ব্যক্তি সৌমিত্র, আর এখন জ্ঞানেন্দ্র।

জ্ঞানেন্দ্র বিজ্ঞান নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে সারাটা জীবন। নামের পেছনে অবশ্য একসময় ‘শংকর’ ছিলো, কিন্তু অক্সফোর্ডে পড়ার সময় সেটা ছেঁটে ওইটুকুতেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। জ্ঞানেন্দ্র নিঃসঙ্গ। গোপেশ্বর বলে একজন থাকে ও বাড়িতে। কেয়ারটেকার। গোপেশ্বর দু’টো ডাল-ভাত ফুটিয়ে দেয়, আর সন্ধ্যায় জ্বালিয়ে দেয় হারিকেনটা। জ্ঞানেন্দ্র রাতভর পায়চারি করেন, প্রায় অন্ধকারে।

মাঝেমধ্যে অবচেতন মনে ঢুকে পড়ে মেঘমালা। তার একমাত্র মেয়ে। এখানে সে থাকে না। বাবাকে ছেড়ে গেছে বহু আগে। মেঘমালা জড়ো করে বাবার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ। বাবার সঙ্গে সে ঝগড়া করে, তর্ক করে। তার বাবা যে ভুল, সারা জীবন ভুলটাকেই গবেষণা বলে আঁকড়ে থাকলেন, প্রমাণ করতে চায় সেটা।

দমকা হাওয়ায় হারিকেনটা নিভে গেলে, গোপেশ্বর ধীর পায়ে আসে। রাতের বেলা শুরু হওয়া গল্পটা চলতে থাকে। কখনও মেঘমালা আসে। কখনও গোপেশ্বর। আর বাকি সময়টা জ্ঞানেন্দ্র, মানে সৌমিত্র, কথা বলে চলেন। বলেন, মহাবিশ্ব নিয়ে তার আগ্রহের কথা, একবার আগুন লেগে বাড়িসুদ্ধ সমস্ত গবেষণার উপকরণ পুড়ে গিয়েছিলো- সে কথা, তার গবেষণায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, ছাত্রদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে- সে কথা।

ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে একটা গল্প সামনে বেরিয়ে আসে। ডালপালা মেলে, পাতা গজায়। গোপেশ্বর যে আসলে গোপেশ্বর নয়, তার নাম মুস্তাফা খলিল। একসময় নকশাল আন্দোলন করতো, পালিয়ে এসেছিলো খুন করে- সে সবও প্রকাশ পায়। জানা যায়, কী নিষ্ঠুরভাবে জ্ঞানেন্দ্র ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করতে গিয়ে ‘খুন’ করেছেন মনিমালাকে। মনিমালা জ্ঞানেন্দ্রর স্ত্রী।

নাটকের নাম ‘ছাড়িগঙ্গা’। পুরো নাটকটি তিনজনের- জ্ঞানেন্দ্র, গোপেশ্বর ও মেঘমালা। বাকিদু’টি চরিত্রে পৌলমী বসু ও দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন। তারা দু’জন মঞ্চে আসা যাওয়া করেছেন, কিন্তু সৌমিত্র মঞ্চ ছাড়েননি একটিবারের জন্যও! পুরোটা সময় জুড়ে অভিনয় করে গেলেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই। মাঝে অবশ্য দু’বার বিঘ্ন ঘটেছিলো। বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিলো। বিকল্প ব্যবস্থাও হয়নি তৎক্ষণাৎ। ওই সময়েও সৌমিত্র মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অন্ধকারে।

গঙ্গা যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের এবারের আয়োজন হচ্ছে ঢাকায়। যোগ দিতে এসেছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যদল সংস্তব। ৪ সেপ্টেম্বর, উদ্বোধনী দিনেই প্রদর্শিত হলো এ দলের নাটক ‘ছাড়িগঙ্গা’। এটি নির্দেশনা দিয়েছেন সৌমিত্র, অভিনয় তো করেছেনই। উৎসবে তার দলের আরেকটি নাটক রয়েছে- ভূতনাথ। আজ (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দেখা যাবে এটি, শিল্পকলা একাডেমীর মঞ্চেই।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫
কেবিএন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।