ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আজ যদি সালমান শাহ বেঁচে থাকতেন!

দেব জ্যোতি ভক্ত (অতিথি লেখক) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫
আজ যদি সালমান শাহ বেঁচে থাকতেন! সালমান শাহ

সত্য অথবা সুন্দরের মতো কিছু কোলাহল মৃত্যু ছুঁয়ে গেলে কার কি যায় আসে? কে কাঁদে গোপনে? কে থাকে অপেক্ষায়? কে বোঝে হারানো গল্পের বুনন? নিক্তিমাপা জীবনের আড়ালে যে ফুরফুরে সমুদ্রটা নিঃশ্বাস দিয়ে কেনা যায় না, সে সমুদ্রটা কতোদূরে অবস্থিত? সে সমুদ্রের গর্জন কতোদিন শোনা যায়?

সালমান শাহ নামে একজনকে চিনতাম। চিনতাম মানে শুধু চিনতামই, কোনোদিন দেখা হয়নি, কোনোদিন কথা হয়নি, হয়নি কোনো চিঠি বিনিময়।

অভিনয় করতেন, মুগ্ধতায় মুখর হয়ে দেখতাম। সে মুগ্ধতা দুষ্প্রাপ্যতাজনিত এক ছায়ায় ঘেরা, সে সময়ের অন্য নায়করা তা বুঝতে পারতেন নিশ্চয়ই, এখনও হয়তো টের পায় কেউ কেউ।

আমরা তার মতো হাঁটতে চাইতাম, তার মতো নাচতে চাইতাম, তার মতো প্রেম করতে চাইতাম। সিনেমা থেকে জীবনের দূরত্ব তিনি কমিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও তার সিনেমা থেকে আমাদের প্রতিদিনের গল্পগুলো ছিলো খুবই আলাদা।

আমরা তখন স্কুলে পড়ি, আশেপাশের বালিকাদের হাঁটা-চলায় মুগ্ধ হওয়া শিখেছি কেবল। সেই সময়ে সালমান শাহ ছিলেন প্রতিযোগিতার বাইরে, কিছুটা এগিয়ে। নাকি অনেকখানি এগিয়ে? উচ্চবর্গের কথা জানি না, মধ্যবিত্তের নায়ক ছিলেন তিনি, শ্রমজীবী, বেকার বা নিম্নবর্গের নায়কও তিনি। তিনি প্রত্যাশার এক সুগন্ধি হাওয়ায় ভিজিয়ে রেখেছিলেন আমাদের। তাই যখন উড়ো খবর পেলাম- সালমান শাহ মারা গেছেন, তখন এমন খবরও পেলাম যে তার মৃত্যুর পর পাঁচজন আত্মহত্যা করেছে। নায়কের মৃত্যুতে ভক্তের আত্মহত্যা করাটা কি রাষ্ট্রবিরোধী?

তখন চিঠিপত্রের যুগ, ল্যান্ডফোন এলিট শ্রেণীর দখলে। ফেসবুকের কথা তখন হয়তো জুকারবার্গের মাথায়ও আসেনি। তবুও পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সালমান শাহ ফ্যান ক্লাব গড়ে উঠেছিলো। এখন তো প্রায় সব নায়ক-নায়িকার ফেসবুকে ফ্যান পেজ আছে। টাকা দিয়ে সেখানে লাইকও কেনা যায়।

সালমান শাহ এক বিস্ময়, চূড়ান্ত এক আবেশ, কিছুটা জাদুবিদ্যার মতো। আমরা মেতে উঠতাম বিস্ময়ে-বিষণ্নতায়। আমাদের সাদাকালো টিভির পর্দা জানতো যে অনুভূতির আত্ম-প্রতিকৃতি। ভি.সি.আর ভাড়া এনে সারারাত সালমান শাহ মুখর হয়ে থাকাটা তো আমাদের কাছে উৎসব ছিলো। যে উৎসব ভেঙে দিয়েছিলো বৈষম্য, আমরা আমাদের সাধ্যমতো যে যেমন পারি ৫ টাকা, ১০ টাকা, ১৫ টাকা, ২০ টাকা দিয়ে এ উৎসব আয়োজন করতাম। তখনকার দিনে সিনেমা হলে যেহেতু ভালো ছেলেরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঢুকতো না, তাই অনেকের কপালেই জুটেছিলো খারাপ ছেলের খেতাব। এর দায়ভার তো একান্তই সালমান শাহর!

প্রেম-ভালোবাসার সিনেমাপাঠে সালমান শাহ’র পর যারা এসেছেন বা এসেছিলেন তারা কতোটা সফল? বা তারা তাদের অবস্থানগত সিনেমাজংশনে কতোখানি স্থায়ী? কে পেরেছে মুছে দিতে প্রত্যাশার চাপ থেকে বাঁধভাঙা হাওয়া? তাহলে কি সালমান শাহ শুধুই একজন নায়ক, নাকি তিনিও মানুষ ছিলেন?

মৃত্যুতে রহস্যের মশলা মিশে গেলে সহজভাবে শুন্যে ঘোরে মনস্তত্ত্বের ঘোড়া। কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ওড়াউড়ি করে এদিক-সেদিক। কী ছিলো তার কষ্ট? কোনদিকে ছিলো তার বেদনাঘর? কে ছিলো তার প্রেমিকা আর কে ছিলো তার শত্রু? কে ছিলো বেহালাবাদক আর কার হাতে ছিলো মৃত্যুর তানপুরা? কেউ কি ছিলো না এমন, যে জানতো তার সীমাবদ্ধতার সূত্রগুলো? আদৌ কি এটা আত্মহত্যা?

সালমান শাহর মৃত্যুর পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে কিছু অস্বস্তি তৈরি হয়ে মনের ভেতরে স্বয়ংক্রিয় কিছু বাক্য গঠন হয়ে যায়, সেইসব বাক্যে অসংখ্য ভুল বানান। বাদ থাক সেসব বানান ভুল করা বাক্যের কথা। তার মৃত্যুর প্রায় ২০ বছর হয়ে গেলো। এখনও অনেকে আক্ষেপ করে বলে, ‘আজ যদি সালমান শাহ বেঁচে থাকতো..!’ এই কথাটা খুব শক্তিশালী, এই কথাটার ভেতরে একটা জ্বলজ্বলে ছায়াচিত্র আছে। ‘আজ যদি সালমান শাহ বেঁচে থাকতো..’ এই কথাটার ভেতরেই সালমান শাহ বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।