ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

বিজ্ঞাপন বিরতির বিরক্তি বিহীন বিনোদন!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
বিজ্ঞাপন বিরতির বিরক্তি বিহীন বিনোদন!

ঢাকা: বিজ্ঞাপন বিরতির বিরক্তি বিহীন ঈদ আয়োজন থাকছে জিটিভি (গাজীটিভি)তে। এতে নিশ্চিত হবে নিরবচ্ছিন্ন বিনোদন ব্যবস্থা।

ঘোষণা ব্যতিক্রমী। আর ব্যবস্থাও চূড়ান্ত। সত্যি সত্যিই এবারের ঈদ আয়োজনে টানা সাত দিন, প্রতিদিন নয় ঘণ্টা সময়ে প্রতিটি পৃথক আয়োজনে বিরতিহীন ঈদ বিনোদন দেবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটি। নাটকে, সিনেমায়, সঙ্গীতে, সংবাদে বিজ্ঞাপন বিরতির অব্যাহত চাপে দর্শক যখন চরম বিরক্ত, ঠিক তখন এমন একটি ঘোষণা দর্শককূলে সৃষ্টি করেছে বিশেষ আগ্রহ।

ঘোষণা আগেই হয়েছে। তবে পুরো আয়োজনটি নিয়ে বাংলানিউজের বিস্তারিত কথা হচ্ছিলো জিটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমান আশরাফ ফয়েজের সঙ্গে। তিনি জানালেন, দর্শকের প্রতিক্রিয়া, বিভিন্ন জরিপ আর নিজস্ব গবেষণা থেকে তারা দেখেছেন, বিজ্ঞাপন বিরতিতে ভরপুর বিভিন্ন বিনোদন আয়োজন দর্শকের জন্য বিনোদন নয় বরং বিরক্তির উদ্রেক করে। আর খুব সহজেই তারা ভর করেন বিদেশি বিনোদনের ওপর। ভিনদেশি চ্যানেল থেকে দর্শকদের দেশি বিনোদন আয়োজনে টেনে আনাই তাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

ঈদের সাত দিন প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত চলবে এসব বিরতিবিহীন ঈদ আনন্দ আয়োজন। নাটক, গানের অনুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান যাই থাকুক না কেনো প্রতিটিই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক দেখতে পাবেন বিরতিহীন টানা।

আমান আশরাফ জানান, দর্শক একবার কোনও অনুষ্ঠান দেখা শুরু করলে তাকে আর বিজ্ঞাপন বিরতিতে পড়তে হবে না। আর তাতে অন্য চ্যানেলে বিশেষ করে বিদেশি চ্যানেলে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। ফলে দেশের দর্শক দেশের চ্যানেলেই আটকে রাখা সম্ভব হবে, এটাই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, বিজ্ঞাপন থাকবে তবে তা হবে অনুষ্ঠানটি শুরুর আগে কিংবা পরে। টাইটেল থেকে শুরু করে শেষ স্ক্রল লাইন পর্যন্ত বিনা বিরতিতে দর্শক দেখতে পারবেন প্রতিটি অনুষ্ঠান।

এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো এসব অনুষ্ঠানের স্পন্সর বা ক্লায়েন্ট নিশ্চিত করা, কিন্তু এখন সেই ক্লায়েন্টই এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে, বলেন আমান আশরাফ।

তিনি জানান, ইউনিলিভার, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, গাজী গ্রুপসহ বেশ কিছু কর্পোরেট সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা সম্মত হয়েছে অনুষ্ঠানগুলোর মাঝে বিজ্ঞাপন প্রচার ছাড়াই স্পন্সর হতে।

বিষয়টিকে একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখেন আমান আশরাফ।

গ্রামীণফোন, ইউনিলিভারসহ দেশের প্রধান সারির বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে বিপণন যোগাযোগের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই আমান বলেন, এই উদ্যোগ নিতে গিয়ে জিটিভিকে কিছুটা রেভিনিউ সেক্রিফাইস করতে হয়েছে, একথা ঠিক কিন্তু মুনাফার দৃষ্টিকোণ থেকে এই উদ্যোগ কোনওভাবেই অলাভজনক কিছু হবে না।

বিনোদন আয়োজন, কী পণ্য বিপণন, যে কোনও কিছুতেই ভোক্তার মনোভাব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেদিকটা বিবেচনায় রেখেই এই উদ্যোগ, বলেন তিনি।

দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমান আশরাফ দেখছেন কনটেন্টকে। তিনি বলেন, কেবল বিরতিহীন চলবে বলেই যে দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়বে তেমনটা নয়। আমরা কি প্রচার করছি, দর্শককে কতটা বিনোদিত করতে পারছি সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। আর সেদিকটা মাথায় রেখে এই সাত দিনের জন্যই তৈরি হচ্ছে আকর্ষণীয় সব আয়োজন।


কী কী আয়োজন থাকছে- তার একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও তিনি তুলে ধরলেন বাংলানিউজের কাছে। আমান আশরাফ জানান, এবারের ঈদে সাত দিনের একটি ধারবাহিক নাটক চলবে বিরতিবিহীন অংশে। যার প্রধান অভিনেতা মোশাররফ করিম। সাত দিন দেশের সাত অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় থাকবে একইরকম বিরতিহীন সাতটি নাটক। এছাড়াও সময়ের সাত জন সেরা পরিচালকের সাতটি নাটক থাকছে। থাকছে, গানের অনুষ্ঠানসহ আরও নানা আকর্ষণীয় আয়োজন।

আমান বলেন, এসব আয়োজনে তারিক আনাম, সূবর্ণা মুস্তাফা, মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান ছাড়াও এই সময়ের জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের যেমন দেখা যাবে, তেমনি তাদের নিয়ে কাজ করতেও এগিয়ে এসেছেন শিহাব শাহীন, অনিমেষ আইচসহ মেধাবী নির্মাতারা।

সময়ের স্বনামধন্যরা এগিয়ে এসেছেন, আর তারা এই উদ্যোগের চ্যালেঞ্জটাকে নিজেদের করে নিয়েছেন, এটাই একটা শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা, বলেন আমান আশরাফ।

পুরো আয়োজনে ক্লায়েন্টকে ভ্যালু দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিটিভি এখানে মুনাফা করতে চাইছে না, দর্শকের সন্তুষ্টিই এখানে মুখ্য। আর সর্বোপরি ব্যবসাকে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার একটা সুযোগ এখানে তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

এই উদ্যোগ সফল হলে তার কৃতিত্ব কার হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই সাকসেস হ্যাজ মেনি ফাদারস। নিঃসন্দেহে প্রথম অর্জন হবে দর্শকের, তারা বিরতিহীন বিনোদন পাবেন। আর ক্লায়েন্ট এজেন্সিগুলোর সহযোগিতা মিলেছে বলেই এই পথে জিটিভি এগিয়ে যেতে পারছে, তারাও হবে সাফল্যের অন্যতম ভাগীদার। আর সকল অনুষ্ঠানের কাস্ট অ্যান্ড ক্রুদেরও কৃতিত্ব থাকবে কারণ তারাই নিশ্চিত করবেন আকর্ষণীয় কনটেন্ট যা দেখতে দর্শক জিটিভির পর্দা খুলে বসে থাকবে পুরো ঈদ আয়োজনে।

দর্শকদের কোন অংশকে টার্গেট করেছেন? এমন প্রশ্নে আমান আশরাফ বলেন, জরিপ বলছে ঈদ-পার্বনেও বিদেশি চ্যানেলে লটকে থাকে প্রায় ৪০ শতাংশ দর্শক। আর বিশ্লেষণ বলছে, তারা অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিরতিকে একটা অন্যতম কারণ হিসেবে দেখান। সেক্ষেত্রে ওই দর্শকদের দেশি চ্যানেলে টেনে আনাই হবে প্রধান উদ্দেশ্য। আর সেরা সেরা নির্মাতাদের হাতে সেরা সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়ে যেসব আয়োজন এবারের ঈদে আনা হচ্ছে তাতে যেকোনও টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকই আটকে যাবে জিটিভির পর্দায়, প্রত্যাশা আমান আশরাফ ফয়েজের।

তিনি বলেন, জিটিভি একটি সাধারণ বিনোদনধর্মী চ্যানেল, তবে স্পোর্টস-এর পীঠে চড়েও জিটিভি এখন এগিয়েছে বহুদুর। সংবাদভিত্তিক চ্যানেল না হলেও খবর প্রচারে জিটিভি মানের সঙ্গে সমঝোতা কখনোই করে না। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে খেলা সবসময় থাকে না, আর যখন থাকেনা তখন সুষ্ঠু বিনোদনকেই বড় পুঁজি করতে হয়, এটাই জিটিভির কৌশল।

কতটা সফল? সে প্রশ্নের উত্তরে বললেন, দর্শকই ভালো বলতে পারবেন। তবে গত এক বছরের মোট দর্শকের পরিসংখ্যান একত্রিত করে হিসাব কষলে জিটিভিই এখন মার্কেট লিডার।

ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ, এমন মত দিয়ে তিনি বলেন, সে কারণেই এই অভিনব ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আর আসছে দিনগুলোতে দর্শকদের জন্য এমন নতুন নতুন চমক আসতেই থাকবে।

বাংলাদেশ সময় ১৭০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
এমএমকে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।