ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

পিঠস্থানে বিজয় দেখালেন লিসা রে

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৭ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৬
পিঠস্থানে বিজয় দেখালেন লিসা রে লিসা রে-ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গলা ছুঁয়ে থাকা মণিমুক্তার হার। লম্বা কানের দুল।

একপাশে সিঁথি কাটা পরিপাটী চুল। সোনালি-রূপালি চকচকে পোশাক। রূপের জাদু তো আছেই। সবকিছুকে ছাপিয়ে আলাদাভাবে মনে রইলো বলিউড অভিনেত্রী লিসা রে’র পিঠস্থানে ‘ভি’ ডিজাইনটা। ‘ভি’ মানে ভিক্টোরি বা বিজয়। পোশাকের ডিজাইনে ক্যানসারকে জয় করার বার্তাই দিলেন ৪৪ বছর বয়সী এই তারকা।
 
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের আলোচিত ব্র্যান্ড ট্রেসেমের আয়োজনে শুক্রবার (৩ জুন) রাতে রাজধানীর লে মেরিডিয়ান হোটেলের স্কাই বলরুমে অনুষ্ঠিত ‘দ্য লাস্ট্রাস রানওয়ে’র শো-স্টপার ছিলেন লিসা। এখানে সারাহ করিমের ডিজাইন করা পোশাক পরে ক্যাটওয়াকে অংশ নেন তিনি।

এর কিছুক্ষণ পর বাইরে আয়োজকদের পরিচিতজনদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য এসেই অপেক্ষমাণ আলোকচিত্রীদেরকে পিঠে ‘ভি’ ডিজাইন দেখিয়ে ছবি তোলার জন্য পোজ দেন লিসা। এ আয়োজনে অংশ নিতেই শুক্রবার ঢাকায় পা রাখেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তার অ্যাকাউন্টে ঢাকার একটি স্থিরচিত্র দেখা গেছে এদিন।

সৌন্দর্যের চেয়ে মৃত্যুকে জয় করে ফেরা নারী হিসেবে লিসা রে অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন। ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েও আশা ছাড়েননি তিনি। প্রতিকূলতা পেরিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।

২০০৯ সালের মাঝামাঝি রক্তকণিকায় মাল্টিপল মাইলেমো নামের ক্যানসারে আক্রান্ত হন লিসা রে। তার অস্থিমজ্জায় ক্যানসারের সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরের বছর প্লাজমা প্রতিস্থাপন পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যানসার থেকে মুক্তি পান তিনি। দুরারোগ্য ব্যাধির সঙ্গে তাকে কঠিন সংগ্রামে চালিয়ে যেতে হয়েছে দুই বছর।

চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা আর নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে ক্যানসারকে জয় করতে পেরেছেন লিসা। ক্যানসার আক্রান্ত দিনগুলো ও তা থেকে উতরে ওঠার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা নিয়ে বই লিখেছেন তিনি। পাশাপাশি এই ক্যানসার সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসছেন। বিভিন্ন দেশে মেয়েদের অধিকার আদায়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টাও করছেন। ‘বিকজ আই অ্যাম অ্যা গার্ল’-এর মতো বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছেন।

লিসা রে একাধারে অভিনেত্রী, মডেল, টিভি উপস্থাপিকা, জনদরদী ও সমাজকর্মী। পুরো নাম লিসা রানি রে। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে টরন্টোয় জন্ম। বাবা বাঙালি, মা পোলিশ। শৈশবের কিছু সময় কেটেছে কলকাতার শ্যামবাজারে। ঢাকায় আসার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সেটাও জানিয়েছেন তিনি। বাবার সঙ্গে একসময় সত্যজিৎ রায় ও ফেদেরিকো ফেলিনির ছবি দেখতেন নিয়মিত।

র‌্যাম্পে পায়চারি শেষে লিসা মাইক্রোফোন নিয়ে বলেন, ‘সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। হ্যালো ঢাকা! আমাকে কলকাতার মেয়েই বলতে পারেন। বাংলার প্রতি তাই ভালো লাগা আছে। বাংলাদেশে এবারই প্রথম এলাম। ‘দ্য লাস্ট্রাস রানওয়ে’র পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। ইচ্ছে আছে ‘লাস্ট্রাস রানওয়ে’র ষষ্ঠ বর্ষে এমনকি দশম বর্ষেও আসবো! সবাইকে আবার ধন্যবাদ। শুভরাত্রি। ’

১৯৯০ সালে বোম্বে ডাইংয়ের বিজ্ঞাপনে কালো সুইমস্যুটে নজর কাড়েন লিসা। তামিল ছবি ‘নেতাজি’র মাধ্যমে চলচ্চিত্র অভিনয়ে অভিষেক হয় ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালে তাকে প্রথম দেখা যায় বলিউডে, ‘কসুর’ ছবিতে। দীপা মেহতার পরিচালনায় ‘ওয়াটার’ ছবিতে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি পান লিসা।
 
অভিনয় করেছেন হলিউডের কয়েকটি ছবিতে। এর মধ্যে ‘আই কান্ট থিঙ্ক স্ট্রেইট’, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড আনসিন’ উল্লেখযোগ্য। গত ২৭ মে মুক্তি পেয়েছে লিসা রে অভিনীত ‘বীরাপ্পন’। রামগোপাল ভার্মার ছবিটি  প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এমন সময়ে তার ঢাকা সফর হওয়ায় বাড়তি আকর্ষণও ছিলো। এই শহরে তার ক্যাটওয়াক নিয়ে উৎসাহের কমতি ছিলো না। তাকে মঞ্চে পেয়ে ক্যামেরা আর মোবাইলে অতিথিদের ব্যস্ত হয়ে ওঠায় তা বোঝা গেলো ভালোভাবে।

এবারের ‘দ্য লাস্ট্রাস রানওয়ে’র আয়োজনে উদ্বোধন করা হয় ট্রেসেমের চুল সুরক্ষার ব্র্যান্ড ‘আয়োনিক স্ট্রেংথ প্রোডাক্ট রেঞ্জ’। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করেছে ইনফিনিটি। লিসা রে ছাড়াও ভারত থেকে এসেছিলেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী ডিজাইনার নীতা লুল্লা। তার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল, সারাহ করিম, আনোখি, সালিতা নন্দা ও জুরহেমের পোশাক পরে মঞ্চে হেঁটেছেন মডেলরা।

বাংলাদেশ সময় : ০২০১ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।